পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর্যশিল্পের ক্রম ৩২১ আগাগোড়া প্রস্তর কল্পনার-রাজ্য ছেড়ে রূপের রাজত্বে বেরিয়ে এল তেত্রিশ কোটির চেয়ে বেশি দিনের পুরোনো সমস্ত দেবতা ! - নতুন নতুন দেবতার রূপে, বাহনের রূপে, প্রতীকের ছলে, প্রতিমার বেশে দেবলোক নেমে এল মত লোকের বুকের উপরে। শিল্পীর রচ রূপের পরিখা ও দুর্গপ্রাচীর তারি মধ্যে চিরদিনের মতো দেবতা সমস্ত বরাভয়-হস্তে স্থির হয়ে বসলেন, শিল্প-কৌশলের চমৎকারিত। পরিপূর্ণতা পেয়ে তাবৎ শিল্পকে একটি অদ্বিতীয় স্থান দিতে চল্লেী জগতে। এই যুগটাকে ভারতশিল্পে অবতার-যুগ বলে ধরতে পারি। আর্থ অনার্য সবাই মিলে’ কালে কালে যে সব কল্পনার সঞ্চয় কাব্যে সাহিত্যে ধম গ্রন্থে জমা করে তুল্লে মানুষ, সেইগুলোই রূপ পেয়ে অবতীর্ণ হ’তে থাকলে কলা-কৌশলের রাস্তা ধরে । যা গল্পে কথায়, যা স্বরে ও ছন্দে, যা তত্ত্ব-জিজ্ঞাসায় অগোচর ভাবে বর্তমান হচ্ছিল চোখের সামনে তা রূপ ধরে দাড়ালো চিত্রপটে প্রস্তরের ও ধাতুর মূর্তিতে নাট্যে নৃত্যে যাত্রায়। ইন্দ্রের বজ্র সে রূপ ধরে পূজাৰ্ছ হ’য়ে রইলো তিব্বতের শিল্পীদের হাতে, ইন্দ্র রূপ পেলেন ইলোরা গুহার শিল্পীর হাতে, সূর্য রূপ পেলেন উড়িষ্যার কারিগরের হাতে, বাঙলা রূপ দিলে দেবীগণের, দ্রাবিড় সভ্যতা রূপ দিলে প্রলয় তাণ্ডবের ছন্দকে রূপের বিরাট ঢেউ । দুই ভাবে মিলে’ রূপের রাগলীলা চল্লো। অার্যাবতের অন্তর বাহির দুই গতি মস্ত একটা চক্ৰ স্মৃষ্টি করলে পৃথিবীর শিল্পীদের জগতে। কত উষা কত রাত্ৰি কত শীত কত শরৎ ও বসন্ত ক্ষণে ক্ষণে অালো ছায় এবং মায়ায় রঙ বুলিয়ে গেছে এই যুগ যুগ ব্যাপী আমাদের শিল্প-চেষ্টার উপরে—পাথরে চিত্রে অলঙ্কারে ভূষণে কাপড়ে মন্দিরে দীনের কুটারে রাজার প্রাসাদে—তার লক্ষণ সমস্ত সুস্পষ্ট বিদ্যমান দেখি আজও । প্রত্নতত্ত্ববিদ তারা যে ভাবে এক একটা রাজবংশের সঙ্গে জড়িয়ে শিল্পের ইতিহাস টুকরো টুকরো ভাবে বিচার করে চলেছেন তাতে করে আর্য-শিল্পের পরিপূর্ণ রূপটা চোখে পড়তে বিলম্ব হয়। মৌর্য শিল্প গুপ্ত শিল্প মোগল শিল্প এমনি গোট কতক ভাগ দেখি, কিন্তু শুধু এই টুকুর মধ্যেই শিল্প বদ্ধ নয়—নদীর একমুখে যেমন অনন্ত প্রস্রবণ, অন্য মুখে যেমন অনন্ত সমুদ্র, ছুটি কুল যা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে যেমন বদ্ধ নয় নদী—তেমনি এই আর্য-শিল্পের ধারার এক মুখ অনার্য অবস্থার O. P. 14-41