পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৩৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

আকাশে বন্দী থাকে—আর্টিষ্টকে খোজে তারা সবাই, তাদের নিয়ে লীলা করবে এমন এক এক জন খেলুড়ি আর্টিষ্টকে খুজে ফিরছে বিশ্বজোড়া রূপ · সকলে । সেই বিক্রমাদিত্যের আমলে একটা শুকনে গাছ-মাঠের ধারে সে অপেক্ষা করছিলো যে তাকে নিয়ে একটিবার সত্যি সত্যি খেলবে তার জন্য। রাজা গেলেন পথ দিয়ে, দেখলেন শুকনো গাছ। রাজার সঙ্গেই রাজকবি—তিনি কবি নয় কিন্তু পষ্ঠে কথা বলেন—তিনি পদ্যে বল্লেন—এ যে দেখি শুষ্ক কাঠ । ভাগ্যি ছিলেন সঙ্গে সত্যিকার কবি ও খেলুড়ি, তিনি বলে উঠলেন—“কি কও শুকনে কাঠ ? ‘ও সে তরুবর রসের বিরহেঁ— হুতাশে দহে ! একটি ছেলে দেখলে শুকনো কাঠ নয়—সে ঘোড়া, সে মানুষ, সে কত কি ? একজন কবি দেখলেন শুকনো গাছ নয়—রসের পাত্র সেটি, ছেলে করে রূপের আরোপ, কবি করেন রূপের আবির্ভাব শুকনো কাঠে । ছেলে রূপ আরোপ করলে যখন, তখন সে যা চায় তাই হ’ল –সেই শুকনো কাঠের শুকনে কাঠ থাকা চল্লো না, ঘোড়া মানুষ কত কি হ’তে হ’ল । ছেলে সে স্বমতে চল্লো, কাঠ রাখলে না গাছও রাখলে না—একে বলা চল্লো স্বারোপক রূপ । কবি যখন শুকনো গাছকে তরুবর বলে’ দেখালেন তখন তিনি একটা ইচ্ছামতে রূপের আরোপ করলেন গাছে এ কথা বলতে পারিনে, কেননা, রূপারোপাৎ তু রূপকম্—এই কথা পণ্ডিতেরা বলেছেন। এখানে রূপের আরোপ হ’ল না রূপের নষ্ট হয়েছিল যা তা পুনর্বার ফিরে’ এল রূপে । সুতরাং একে বল্লেম স্বরূপক রূপ। এই দুই নিয়মই খাটলে রূপস্থষ্টির কাযে । কথা দিয়েই লিখি ছবি দিয়েই কি সুর দিয়েই বলি গাছটিকে খানিক শুকনে কাঠ বলে জানালেম তো কাঠুরের কাযে এলো খবর, রসিকের তাতে কি এল গেল ? শুকনো গাছের অাশা নিরাশা—কত বর্ষায় তার পাতায় পাতায় ভরে ওঠার স্বপ্ন, কত শীতে তার পাতা ঝরানোর গান, কত বসন্তে তার ফুলদোলের স্মৃতি সব কথা জড়িয়ে থাকে মরা গাছেও, কত পাখীর আসা যাওয়ার খবর কত ছায়ার মায়। দিয়ে গড় তার পরিপূর্ণ রূপ—তাই যদি না ধরা পড়লো রূপদক্ষের মায়াজালে তবে কি হ’ল ?