পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৫০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

অসমানকে নিয়ে যেমন রাগরাগিণী রূপ পায়, কবিতায় ছবিতে মূর্তিতেও তেমনি নানা সমান অসমান একত্র হয়ে রূপ-রচনা মানানসই হ’য়ে ওঠে। অলঙ্কারশাস্ত্রে তিন জাতীয় নায়ক নায়িকার কথা বলা হ’ল— দিব্য, আদিব্য এবং দিব্যাদিব্য । এই তিন রূপের কথা শিল্পশাস্ত্রেরও কথা—দেবতা, মানুষ, এবং দেবতা ও মানুষে মিলিত রূপ। দেবলোক, মত লোক এবং গন্ধৰ্বলোক এই তিন লোকের রূপ নিয়ে হ’ল কথা এবং মান পরিমাণ ও লক্ষণ দেওয়া হ’ল শিল্পশাস্ত্রে কিন্তু কাযের বেলায় দিব্যদিব্য রূপের মান পরিমাণ এবং অদিব্য মান পরিমাণই কাযে এল-রূপ হ’ল অদিব্য, রস হ’ল দিব্য, অদিব্য পাত্রে পরিবেষিত হ’ল দিব্য রস। সব দেশের প্রতিমা-শিল্পের দৌড় এই পর্যন্ত হ’ল—সমান অসমানের মিলন, নিত্যে অনিত্যে মিলন, মতরূপের সঙ্গে মিলে গেল দিব্য রস ও ভাব, মাটির পাত্রে স্বৰ্গ-মুধা এই সীমা ধরে রইলো মানুষের আর্ট রচনা। শিল্পশাস্ত্রের প্রতিমা লক্ষণে যে মান পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে দেবতা ও দেবতাদের বাহনাদির জন্য—ত এই গোচর রূপ সমস্তেরই মাপ কমিয়ে বাড়িয়ে স্থির করা হয়েছে, যথা—নবতাল দশতাল কৌমার বামনী রাক্ষসী ইত্যাদি। মানবদেহের বিরাটুত্ব ও বৈরূপ্য নিয়ে হ’ল রাক্ষসী মূর্তি, বরাহ আর মানুষের মান পরিমাণ বড় করে নিয়ে হ’ল বরাহ অবতার, পাখী আর মানুষে মিলে কিন্নর, মানুষের মাপের বিরাটত্ব ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাহুল্য এই নিয়ে হ’ল দেবদেবীদের মূর্তি সমস্ত—কেউ চার হাত কেউ দশ হাত কেউ চতুমুখ পঞ্চমুখ দশমুণ্ড গজানন নরসিংহ নরনারায়ণ হরিহর হরপার্বতী এমনি কত কি ! পাখী অার চোখে মিলে দিলে খঞ্জন-চোখ যখন তখন বল্লেম দুই অসমান হ’ল সমান, হরিণ-চোখ —সেখানে কিন্তু দুই চোখে চোখে মিলে’ হল এক ; এখানে বলতে পারি সমানে সমানে মিলন। পাখীতে মানুষে মিলে’ হ’ল কিন্নরী, এইভাবে সারা জীবজগতে সমান অসমান মান পরিমাণ এক করে দিয়ে ৰিশ্বরূপ , গড়ে নিলে প্রতিমা-কারক। তারপরে আবার গাছ পালা ফুল পাতা নিয়ে—কল্পতরু পারিজাত এমনি নানা রূপের স্থষ্টি চল্লো, তারপর জড়জগৎ —সেখানে শালগ্রাম শিবলিঙ্গ ইত্যাদি পাই,—এর সবাই ধর্মপ্রচারের কাযে এসে গেল। এই যে প্রতিমা গড়ার মান পরিমাণ এর ভিত্তি হ’ল মতরূপের ব্যতিক্রমের উপরে। মত রূপ তাদের সুনির্দিষ্ট ও নিজস্ব ও