বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভাব
৩৫৯

ভাব হ’ল? এর মীমাংসা করা নৈয়ায়িকদের কাজ, তবে এটা নিজে নিজে আমরা সবাই অনুভব করেছি যে শীতকালের বর-কনে দুজনের কাছেই কোকিল দিলে না সাড়া বাইরে, কিন্তু বুকের ভিতরে পড়ে’ গেল তাদের তাড়া ভাবের ফুল ফোটাবার; কিন্তু ফুল রইলো ঘুমিয়ে শীতের রাত্রে বনে বনে, হঠাৎ মনে মনে বসন্তবাহার রাগিণীতে মনোবীণা বেজে উঠলো আপনা হ’তে, লেগে গেল সেখানে বসন্ত উৎসব।

 মানুষের ভাব প্রকাশ করে যে সমস্ত রস-রচনা কবিতা গান ছবি ইত্যাদি ইত্যাদি—তারা কোনটা সহেতুক কোনটা এইভাবে অহেতুক বলে ধরতে পারি। দু’ তিন পাট কাপড় জুড়ে কাঁথা বোনা হচ্ছে। এই কাঁথা বোনা হ’ল শীতের নিমিত্ত, শীত হ’ল হেতু এখানে কাঁথার। যেখানে শীত নেই সেখানে কাঁথা বোনার কাজ হয় অকারণে কাজ। শীতের কাঁথার উপরে যে কাজটা করা যাচ্ছে সেটা কি শীত নিবারণের নিমিত্ত করা হচ্ছে? সুন্দর দেখাবে বলেই তো কাঁথার উপরটায় কাজ করছি, কাজেই শীত এবং সৌন্দর্য দুটো হেতু হ’ল কাঁথা রচনার বলতে হয়।

 যে রচনার হেতু মাত্র আপনা হ’তে রসের উদয়, তাকে বলতে পারি অহেতুক রচনা। না হ’লে হেতু নেই কারণ নেই কোনো কিছুর নিমিত্তও নয় অথচ রচনা হ’ল কিছু,—এমনটা হয় না। ছেলেটা কোথাও কিছু নেই খেলতে খেলতে হঠাৎ কান্না ধরলে কি গেয়ে উঠলো কি নাচ সুরু করলে, ছেলের মনের ভিতরটাতে কি হচ্ছে ধরা গেল না, কাজেই বল্লেম—ছেলে অকারণে হাসে কাঁদে কেন দেখতো।

 শিল্প-কাজ সমস্তের মধ্যে একটা দিক থাকে যেটা রস ও ভাবের দিক। সেখানে ভাব উদয় হল, কবিতা লিখলেম, ছবি লিখলেম, পান গাইলেম, নৃত্য করলেম; ভাবের বশে কলম চল্লো তুলি চল্লো হাত চল্লো পা চল্লো। শীতের জন্য যে কাঁথা সেটা সুন্দর না হ’লেও কাজের ব্যাঘাত হয় না কিন্তু তাকে যদি শুধু শীত-নিবারণকারী না রেখে চিত্তহারীও করে’ দিতে চাই তবে খানিক সুন্দর কারুকার্য দিয়ে ভাবযুক্ত করা চাই, তবেই সেটা একটা স্থান পেলে শিল্পজগতে, না হ’লে সে রইলো কাজের জগতে খুব কাজের জিনিষ হ’য়ে পড়ে।

 একটা দিক শিল্প-কাজের যেটা হচ্ছে প্রকরণের বা টেকনিকের দিক, সেখানে নৃত্যের আঙ্গিক ব্যাপার গানের বাচিক ব্যাপার ও