পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৬৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কবির দেওয়া সাজ ধরলে এক একটা ভাব ও রস ভীষণ মূর্তিতে। ধর কবি যখন বল্লেন উপমা দিয়ে “সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতেব”—এখানে ভাবটা তিনি মন থেকে আরোপ করছেন এও বলতে পার, আবার লতার মতে৷ অনেক রূপসী ও রূপসীর মতো অনেক লতা প্রত্যক্ষ দেখে এই কথাগুলি কবি বলছেন এও বলতে পার। পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ রুদ্রের ভাব ভঙ্গি আকৃতি ,প্রকৃতি কিছুই নেই তাতে, অথচ শিধত্ব সম্পূর্ণ আরোপ করে দেখলেন ভক্ত, কিন্তু পূর্ণ চন্দ্র তাতে দেখলেম সোনার থালের ভাবটা, ফুলে দেখলেম ফুলকুমারীকে,--সেখানে নিজের মনোভাব বা কল্পনা আরোপ করে দেখতে হ’ল না, ভাবটা বস্তু থেকেই পেয়ে গেলাম। এই ভাবে বলতে পারি আরোপিত ভাব এবং আহরিত ভাব এই দুই রাস্তায় চলাচলি ভাবুকের মনের। কেন যে একটা ভাবে একটা কিছুকে দেখি আমরা তার সঠিক হিসেব সব সময়ে খুজে পাওয়া যায় না। পেচাটা রাত্রির অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে চলা ফেরা করে, চিৎকারটা বিকট পেচার, সুতরাং নিশাচর বলে একটা ভয়ের ভাবের সঙ্গে জড়িয়ে দেখার অর্থ বুঝি, কিন্তু কাক সে দিব্যি দিনের অালোতে দেখা দেয়, রঙটাও তার কালো কৃষ্ণের মতোই সুন্দর চিকণ কালে, কেন যে যমদূত ভেবে ভয় খেলে মানুষ তাকে তার অর্থই পাইনে। যার ভাবটা ঠিক বোঝা যায় না তাকে ভয়ের ভাবে দেখি আমরা, আবার যা ভাল বুঝি না এমন গভীর রহস্ত্যে ঘেরা কিছু সেও ভাব নিয়ে মনকে টানে। চাদনী রাত সেখানে ভাবুকের আনন্দ, হয়তে যে ভাবুক নয় তারও আনন্দ, সুতরাং দুজনেই , না হয় জ্যোৎস্নারাতকে একটা ফুটন্ত ফুলের মতো আনন্দরূপ বল্লে, কিন্তু রাত্রির ভাব বুঝিনে সবাই যেখানে অন্ধকারে, যে ভাবুক নয় সে ভয়ে চুপ রইলো কিন্তু ভাবুক সে গভীর রাতের স্তব্ধ ভাব দেখে ভাবে বিভোর হয়ে কত কথাই বলে’ চল্লো দেখি । দিনে বোধ করি চারিদিকে জাগ্রত ভাব, রাতে বোধ করি সুপ্তির ভাব এবং এই দুই ভাবেতে করে সত্যিই আমাদের ঘুম ভাঙায় ঘুম পাড়ায়ও । উৎসবের রাত আলোতে আলো হ’ল, নাচে গানে আনন্দে পরিপূর্ণ হ’ল, ঘুম এল না তখন, রাত পোহলে জেগে জেগে কোথা দিয়ে, কিন্তু যেমনি উৎসব বন্ধ হ’ল অমনি আলম্ভের ভাব এসে ধরল চেপে, ঘুম এল, মনমরা হয়ে থাকলেম শুয়ে যদিও জানি তখন বেল পুরের জাগরণে