পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৬৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

একেবারে গোপন রাখলে রচনার উদ্দেশু মাটি হয়, কাজেই নানা ব্যঞ্জন নানা ভঙ্গি দিয়ে কোথাও ভাবকে সুপরিস্ফুট কোথাও অপরিস্ফুট করে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। ভাব ভাবাভাস ভাবোদয় ভাবসন্ধি ভাবসরলত। এমনি ভাবের নানা দিকের কথা অলঙ্কণরশাস্ত্রে বলা হয়েছে, এ সবই কাজে আসে আর্টিষ্টের রকম রকম কাযের বেলায় । বিষয়ট। এক কিন্তু কি ভাবে তাকে প্রকাশ করা হ’ল লেখায় বা চিত্রে—এই নিয়ে প্রভেদ এক রচনাতে অন্ত রচনাতে। চন্দ্রোদুয় জলের ধারে সে এক ভাব, চন্দ্রোদয় বনের শিয়রে সে আর এক ভাব—“চন্দ্রোদয়ারম্ভেমিবাম্বুরাশিঃ”— এ এক ভাবের ছবি জলের ঢেউয়ের গুটিকতৃক টান আর পূর্ণ চন্দ্রটির আtভা—জাপানের আঁকা ছবির ভাব । আবার “শারদ চন্দ্র পবন মন্দ বিপিনে ভরল কুসুমগন্ধ”—এখানে আর এক ছবি আর এক ভাব যেন কাংড়ার কোনো শিল্পীর আঁকা ছবিখানি, হুবহু সেই ভাব । এখন কবি কালিদাসের চন্দ্রোদয়ের ছবি থেকে পাচ্ছি জলরাশির স্ফীত ও উচ্ছসিত ভাব—এপার-ওপার নেই কেবল ফুলে’ ফুলে উঠছে জল আর জল, চাদ উঠি উঠি করছে—এই ভাব এই ভঙ্গি এই অবস্থা। আবার ছেলে ভুলোনো ছড়ার অজানা কোন এক কবি—র্তার চন্দ্রোদয়—“তুলতে ফুলতে বান এসেছে, জলে কত চাদ ভেসেছে, সোনার বরণ সোনার চাদ ।” চাদের আলোয় কোন নদী বইছিলো গায়ের ধারে সেই দেখে ভাব জাগলো গেয়ে কবির কিন্তু কাজটা হ’ল আর্ট হিসেবে কালিদাসের চন্দ্রোদয়ের সমানই ভাবের জিনিষ। যে ভাবুক সে সব জিনিষেই ভাব যোজনা করে দিতে পারে, ভাব জাগাতেও পারে সামান্ত অসামান্ত সধ জিনিষ দিয়েই ; এক আঁজলা ফুল এক মুঠো পুতি বা মোতা এগুলোকে ভাবযুক্ত করে দেওয়া সহজ কম নয়। প্রথম রাত্রে সুভদ্রার অভিসার অজুনের কাছে নিমল হয়েছিল, তারপর আর্টিষ্ট সত্যভামার হাতের একটু পরশ যখন সুভদ্রাকে ভাবময়ী করে ছেড়ে দিলে তখন ভাব হ’য়ে গেল অজুনে সুভদ্রায় । মালিনী সে যে হার গেঁথে দিলে মুন্দরকে, তা তো শুধু ফুলহার হ’ল না, ভাবের বেড়িও হ’ল। শ্বেতপাথর গেথে-গেথে ইমারৎ সাহেব-কোম্পানীও করেছে,কিন্তু কী পাথরের গাথনিই গাথলে তাজের নিমাত যা দেখে ভাবে বিভোর হতে হয় আজও কবি অকবি সবাইকে ঈজিপ্টের পিরামিড তাকে কোনে