লাবণ্য সম্বন্ধে উজ্জ্বলনীলমণি-কার’ বল্লেন, “মুক্তাকলাপের অন্তর হইতে যে ছটা বহির্গত হয় এবং স্বচ্ছতাপ্রযুক্ত অঙ্গ সকলে যে চাকচিক্য প্রতীয়মান হইয়া থাকে তাহাকেই লাবণ্য বলে।” স্ত্রীরাধার অঙ্গদ্যুতির সঙ্গে মণিময় মুকুর এবং শ্রীকৃষ্ণের বক্ষদেশের সঙ্গে মরকত-মুকুরের তুলনা দিয়ে এটা বোঝালেন রসশাস্ত্রকার। বৈষ্ণব কবিতায় লাবণি শব্দ অনেকবার ব্যবহার হচ্ছে দেখি—‘ঢল ঢল কাঁচা সোনার লাবণি’। বৈষ্ণব কবিদের মতে লাবণ্য হ’ল—প্রভা, দীপ্তি, স্বচ্ছতাবশতঃ ঔজ্জ্বল্য, চলতি কথায় পালিস বা চেকনাই। অভিধানের মানের সঙ্গে মিলছে না—লবণস্য ভাবঃ অর্থাৎ লবণিমা কথাটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে স্বাদের, যাকে ইংরিজিতে বলে taste তাই। রূপ দিয়ে প্রমাণ দিয়ে ভাবভঙ্গি দিয়ে যা রচনা করা হ’ল তা tasteful বা লাবণ্যযুক্ত করা হ’ল তো হ’ল ভাল। ‘ভাবলাবণ্যযোজনম্—ভাব-যোজনা এবং লাবণ্য-যোজনার কথা বলা হ’য়েছে চিত্রের ষড়ঙ্গে। যাতে যেটা নেই তাতে সেইটি মেলালেম যখন তখন বল্লেম—এটি যোজনা করা গেল। রূপকে বা রূপরেখাকে ভাবযুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই লাবণ্যযুক্ত করার কথা উঠলো। রন্ধন-শিল্পে লবণিমা ও লাবণ্যের যোজনা একটা বড় রকম ওস্তাদি, সেখানে বেশি লবণ কম লবণ দুয়েতেই বিপদ আছে। রান্নাতে যখন নুন মিশলো তখন সমস্ত জিনিষের স্বাদটি ফিরিয়ে দিলে লবণ-সংযোগ, লবণ জিনিষটাও তখন পৃথক নেই, সবার সঙ্গে মিলে’ একটা চমৎকার স্বাদে পরিণত হ’য়ে গেছে। তেমনি সকল রচনার বেলাতেই সূপকারের মতে রূপকারও একটুখানি লাবণ্য যোগ করে, যাতে করে’ স্বাদু হ’য়ে ওঠে রচনাটি।
রসশাস্ত্রকার বলেছেন,—“মুক্তাকলাপের অন্তর হইতে যে ছটা বহির্গত হয় তাহাকে লাবণ্য বলি।” এতে করে’ বোঝাচ্ছে রূপের প্রমাণের ভাবের অন্তনিহিত হ’য়ে বর্তমান থাকে লাবণ্য, শুধু শিল্পীর অপেক্ষা রচনার কৌশলে সেটিকে প্রকাশ করা। খনির মধ্যে সোনা যখন আছে তখন লাবণ্য তার থেকেও নেই, কারিগরের হাতে পড়লে তো লাবণ্য দেখা দিলে সোনায়—‘ঢল ঢল কাঁচা সোনার লাবণি’; মুক্তার বেলাতেও