পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৮০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

তার নকল এবং তিনবর্ণ প্রতিলিপি এক লাবণ্য দেয় না, দিতে পারেও না। এই লাবণ্যের ছোয়াচ নিয়ে শিল্প-কাজের উচ্চনীচ ভেদ স্থির করা চলে। একটা মোমের পুতুলের লাবণ্যে আর আসল মামুযটির লাবণ্যে এই ভাবে ভেদাভেদ লক্ষ্য করি আমরা এবং বলে থাকি—আহা মেয়েটি যেন মোমের পুতুল । সেকালের গিন্নিদের মনে ননীর পুতলী বলে একটা বিশেষ রকম লাবণ্যের বাটখারা ধরা ছিল,—এখনো সুন্দর কিছু বলতে ঐ বিশেষণটা চলছে ভাষায়। আর্টের জগতে কিন্তু নিছক ননীর পুতুলের লাবণ্যের মূল্য বড় বেশি নেই। সংসারে ননীর পুতুল বে। এনে গিন্নি নিশ্চিন্ত, বৌটি ননী খেয়ে খেয়ে ক্রমে ননীর তাল হ’য়ে গিন্নি-জগতে উচ্চ স্থান অধিকার করতে চল্পে খুসিই হ’ত সেকালে সবাই, কিন্তু ছবিতে মূর্তিতে এরূপ ঘটনা লাবণ্যে ঘটতে দিলে বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ে। এই অতিলাবণ্যের নিদর্শন বাঙলার নধরমূর্তি মহাদেবের অঙ্গে মুস্পষ্ট বিদ্যমান—জামান প্রিন্ট তাতেও পাবে। বিবাহের সময় মেয়ের ‘শ্রী’ বা ছিরা বলে একটা মাখনের তাল গড়ে তোলে সেইটেই পুরাকালের লাবণ্যময়ীর আদর্শ ছিল হয়তো ! এই ননীর পুতুলে যেমন অতিলাবণ্য দেখি তেমনি পিটুলির পুতুলে আর একরকম অতির দেখা পাই, কাজেই আর্টের দিক থেকে লাবণ্য-যোজনের বেলাতেও বলা চল্লে—‘অতিশয় কিছু নয়’। বিশ্বকম লাবণ্য দিচ্ছেন সকল রূপে সকল ভাবে নানা উপায়ে— আলো ছায়া দিয়ে রঙবেরঙ মিলিয়ে, কঠোরে কোমলে একত্র বেঁধে । নিছক কড়ি নিছক কোমল মুর নিয়ে সঙ্গীতে যেমন কাজ হয় না বিশ্ব জগতেও সৌন্দৰ্য-সৃষ্টি রস-সৃষ্টির কাজে আসে না নিছকের নিয়ম ; সেখানে দেখি—একেবারে ভয়ঙ্কর শক্ত পাথর, তার উপর দিয়ে বইছে একেবারে তরল ঝরণা, নয় তো সবুজ শেওলাতে কোমল হয়েছে পাথরগুলো। পাহাড় শক্ত ঠেকে তখনই যখন তাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে নিয়ে হাতুড়ি পিটে দেখি, কিন্তু আকাশের আলো যখন তাকে নানা লাবণ্যে বিভূষিত করেছে তখন কতখানি কমনীয় হ’য়ে গেছে পাহাড় তা তো দেখতেই পাই। জলের মধ্যে সবটা তরল বস্তু, মেঘ সবটাই বাষ্প, কিন্তু আশ্চর্য উপায়ে বিশ্বশিল্পী তিনি জলেতে মেঘেতেও কড়ি এবং কোমল দুই সুরই ধরেছেন, বাতাসেও কখনো ঘন কখনো ফুরফুরে কখনো তীব্র কখনও