পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৯২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

এমন নকল যে হঠাৎ ডরিয়ে উঠলো সবাই। কোকিল-ডাক এমন ডেকে চল্লেী কলের পাখী যে, বনের কোকিলও মুগ্ধ হ’য়ে পালটা জবাব দিয়ে গেল। এই ভাবের সদৃশকরণ আর্টের জগতে অনুকরণ এবং সচকিত করণ,—এই দুটো পথ ধরে দিয়ে গেল ঠকাঠকি ব্যাপার। এর সম্পূর্ণ উল্টে রাস্তায় গেল সঙ্গীতকলা । শব্দ সেখানে কোকিল ডাকলে না কিন্তু মুর সমস্ত বসন্তবাহার দিয়ে ফুল ফুটিয়ে চল্লো হাওয়া বইয়ে চল্লো। উচ্চস্তরের আর্টে এই ভাবের সত্য-সাদৃশ্ব দেবার চেষ্টাই হয়েছে, ভ্রান্তি জাগানো সাদৃশ্ব নিম্নস্তরে পড়ে রয়েছে অজওঁ। আর্ট যতই নিম্নস্তরে নামতে থাকে ততই বহুরূপীর হরবোলার কৌশলের দিকে ঝুঁকতে থাকে। তখন থিয়েটারে দৃশ্যপট হয়ে ওঠে একেবারে ঠিকঠাক—রাস্ত বাড়ী ঘর দুয়োর সব ঠিক, ঠিক মেঘ ডাকে, ঠিক বজ্রপাত হয়। “তদ্ভিন্নত্বে সতি তদগত ভূয়োধর্মবত্তম”—রূপের ধর্ম এক ভাবের, ধম রসের ধম সে আর এক, সদৃশকরণ কখন রূপের ধমকে কখন রসের ও ভাবের ধমকে ধরে ধরে চলেছে দেখবো । আগুনের ধর্ম আর পুষ্পমঞ্জরীর ধর্ম এক বলে স্বীকার করা চল্লো ন—এ দেয় জ্বালা ও দেয় মোহনমালা ; কিন্তু আর্টিষ্টের হাতে পড়ে এর চমৎকার একটি ফুলঝুরির রচনা করলে যাকে ফুলও বলা চল্লো আগুনও বলা চল্লো। আসল পাখী ওড়ে, লোহার চাদর ঝুপ করে পড়ে ; দুই বস্তুর দুই ধর্ম, কিন্তু আর্টিষ্টের হাতে সাদৃশ্বের কৌশলে লোহার চাঁদর-মোড়া পাখন মেলিয়ে উড়ো কলটা ঠিক পাখীর সাদৃশ্য ধরে উড়ে চল্লো শূন্তভরে। দুই বিভিন্ন বস্তু মিল্লো এক হ’য়ে সাদৃশু দেবার কৌশলে, কখনো ভাবে ভাবে মিল্লো কখনো রূপে রূপে মিল্লো । এই সদৃশকরণের কৌশল দিয়ে মানুষ দেবতাও স্বষ্টি করেছে রাক্ষসও স্বষ্টি করেছে, সুন্দর নিরূপম রূপ ও রস রচনা করেছে। এই কৌশলপ্রয়োগের জ্ঞান যার নেই সেই মূখ অমুন্দর পদার্থের ভূপ রচনা করে মাত্র । অসাদৃশ্যমূলক ভ্রান্তির কথা পণ্ডিতেরা বলেছেন, না থেকেও আছে —এই প্রকারের সাদৃশ্ব আর্টের একটা বড় দিক। বৈষ্ণব গ্রন্থে ঝুড়িকুড়ি উদাহরণ পাই যেমন—