পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দৃষ্টি ও সৃষ্টি
৪৫

পরিপাটি করে মাটি হ’য়ে সাবধান
তবে তায় শস্য হয়—ছোলা মুগ ধান।”

 এই কাযের দৃষ্টি দিয়ে মাঠকে তো দেখাই গেল না, শস্য কেমন করে হয়, মাটি পরিপাটি হয় কিসে, তাও দেখলেম না; মাটি পরিপাটিরূপে বর্ণন ও দর্শন কি করে হয় তা জানতে কাযেই ভাবুকের কাছে দৌড়োতেই হল আমাদের। সেখানে গিয়ে শস্যক্ষেত্রের এক অপরূপ রূপ দেখলেম—

নবপ্রবালোদ্গমশস্যরম্যঃ প্রফুল্ললোধ্রঃ পরিপক্বশালিঃ
বিলীনপদ্মঃ প্রপতত্তুষারঃ

কিম্বা যেমন—

পরিণত-বহুশালি-ব্যাকুল-গ্রাম-সীমা
সততমতিমানজ্ঞক্রৌঞ্চনাদোপগীতঃ॥

 নিছক কাযের দৃষ্টি দিয়ে কাযের মানুষের কাছে মাঠখানা কৃষিতত্ত্বের ও নীতিশাস্ত্রের বইয়ের পাতার মতোই দেখালো, মাঠের সবুজ প্রসার কেমন করে গ্রামের কোন্ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তা দেখলে ভাবুক। কাযের দৃষ্টি দেখলে মুগ মুসুরী ছোলা কলা ধান ফলানো হচ্ছে মাঠের পাট করে, কিন্তু ধান পেকে কোথায় সোনার মতো ঝক্‌ছে, লোধ্র গাছ গ্রামের ধারে কোথায় ফুল ফুটিয়েছে, রাঙ্গা, সবুজ, নানা বর্ণের শস্য, শিশিরে নুয়ে পড়া পদ্মফুল এসব কিছু ধরতে পারলে না অত্যন্ত কাযের কাজি দৃষ্টিটা, অথচ মাঠের ছবি যথার্থ যদি দিতে হয় কি দেখতে হয় মাঠ কেমন করে চষা হয় এটা দেখানোর চেয়ে মাঠে কোথায় কি রং লেগেছে কি ফুল ফুটেছে ইত্যাদি নানা হিসেব না নিলে তো চলে না, সে হিসেবে ভাবুক দৃষ্টি ঠিক দেখার মতো দেখাই দেখলে বলতে হবে।

 কাযের দৃষ্টি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে দৃষ্টির জিনিষকে জড়িয়ে দেখে, আর ভাবুকের দৃষ্টি অনেকটা নিঃস্বার্থ ভাবে সৃষ্টির সামগ্রী স্পর্শ করে। কাযের মানুষ দেখে কেম্বিসটা পর্দা কি ব্যাগ অথবা জাহাজের পাল প্রস্তুতের বেশ উপযুক্ত, কিন্তু ভাবুক অমন মজবুত কাপড়টা একটা ছবি দিয়ে ভরে দেবারই ঠিক উপযোগী ঠাউরে নেয়। সাদা পাথর, কাযের