পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

দৃষ্টি বলে সেটা পুড়িয়ে চুণ করে ফেল, ভাবুক দৃষ্টি বলে সেটাতে মূর্তি বানিয়ে নেওয়াই ঠিক। নির্মম স্বার্থদৃষ্টি, কাযের চোখ নিয়েই সাধারণ মানুষ নিজের মুঠোয় ফুটন্ত ফুলগুলোর গলা চেপে ধরে বলির পাঁঠার মতো, সেগুলোকে বাগানের বুক থেকে ছিঁড়ে নিয়ে পূজোর ঘরের দিকে চলে, আর ভাবুক যে দৃষ্টি নিয়ে ফুলের দিকে চায় তাতে স্বার্থের ভার এত অল্প যে প্রজাপতি কি মৌমাছির পাতলা ডানার অত্যন্ত লঘু অতি কোমল পরশও তার কাছে হার মানে। অতি মাত্রায় সাধারণ অত্যন্ত কাযের দৃষ্টি সেটা ফুলের গুচ্ছকে পরকালের পথ পরিষ্কারের ঝাঁটা বলেই দেখছে, ছেলেবেলার কৌতূহল-দৃষ্টি সেটা রাঙ্গা ফুলের দিকে লুব্ধ দৃষ্টি নিয়ে ডাকাতের মতো বাগান থেকে বাগানের শোভাকে লুটে নিয়ে খেলতে চাচ্ছে। কিম্বা বিলাসের দৃষ্টি যেটা ফুলগুলোর বুকে সূঁচ বিঁধে বিঁধে ফুলের ফুলশয্যা রচনা করে তার উপরে লুণ্ঠন বিলুণ্ঠন করে ফুলের শোভা মলিন করে দিয়ে যাচ্ছে। এদের চেয়ে ভাবুকের দৃষ্টি কতখানি নিঃস্বার্থ নির্মল অথচ আশ্চর্যরকম ঘনিষ্ঠভাবে ফুলকে দেখলে, ভাবুকের লেখাতেই ধরা রয়েছে—

“চল চলরে ভঁবরা কঁবল পাস 
তেরা কঁবল গাবৈ অতি উদাস।
খোঁজ করত বহ বার বার 
তন বন ফুল্যৌ ভার ভার॥”
—কবীর

 কবি কালিদাস এই দৃষ্টি দিয়েই দুষ্মন্ত রাজাকে দেখালেন শকুন্তলার রূপ—

অনাঘ্রাতং পুষ্পং কিসলয়মলূনং কররুহৈ……মধুনবমনাস্বাদিতরসম্!

কিন্তু রাজার বিদূষকের ইন্দ্রিয়পরায়ণ দৃষ্টি অত্যন্ত মোটা পেটের মতই মোটা ছিল, কাযেই রাজার কাছে শকুন্তলার বর্ণন শুনে সে পিণ্ডি খেজুর আর তেঁতুলের উপমা রাজাকে শোনাতে বসে গেল। রাজা বিদূষককে ধমকে বলেন—

অনবাপ্তচক্ষুঃফলোঽসি, যেন ত্বয়া দ্রষ্টব্যানাং পরং ন দৃষ্টম্॥

তুমি দর্শনীয় বস্তুর যেটি দেখবার যোগ্য সেইটি যখন দেখতে পেলে না তখন তুমি বিফলই চক্ষু পেয়েছো।