পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কি সেই চলতি চোখ দিয়ে দেখা, না তেমন শোনা দিয়ে, তেমন পরখ দিয়ে চেয়ে-দেখা, শুনে-দেখা, ছুঁয়ে-দেখা? এ সে ভাবুকের কবির শিল্পীর সেই দিব্য দৃষ্টি, যা অন্ধকারে আলো দেখলে, দুঃখের পরশেও আনন্দ পেল, অসীম স্তব্ধতার ভিতরে সন্ধান পেয়ে গেল সুরের—

“তিঁবির সাঁঝকা গহিরা আবৈ 
ছাবৈ প্রেম মন অসেঁ
পশ্চিম দিগকী খিড়কী খোলো 
ডুবহু প্রেম গগন মেঁ।
চেত-সংবল-দল রস পিয়োরে 
লহর লেহ যা তনমেঁ॥
সংখ ঘণ্টা সহ নাই বাজে 
শোভা-সিন্ধু মহল মেঁ॥”

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, আঁধারের প্রেম তনু মনকে আবৃত করলে, আলো যে দিকে অস্ত যাচ্ছে সেই দুয়ার খোলো, এই সন্ধ্যাকাশের মত বিস্তৃত অন্ধকারের প্রেমে নিমগ্ন হও, চিত্ত-শতদল পান করুক রাত্রির রস, মনে লাগুক, মনে ধরুক অতল কালোর প্রেম-লহরী, সীমাহীন গভীরে বাজ্‌তে থাকুক আরতির শঙ্খঘণ্টা, মিলনের বাঁশি,—আঁধার-সমুদ্রে ফুটে উঠুক অপরূপ রূপ।

 এ যে হৃদয়ে এসে মিলতে চাইলো নূতনতরো দেখা শোনা ছোঁয়া দিয়ে বিশ্বচরাচরের সঙ্গে। আগে আসছিল মানুষের বাইরেটা তার বুদ্ধির গোচরে ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় যন্ত্রে ধরা, এখন চল্লো মানুষের অন্তরটা বাইরের সঙ্গে মিলতে হাতে হাতে চোখে চোখে গলায় গলায়—বাইরের আসা এবং বেরিয়ে যাওয়া এরি ছন্দ আবিষ্কৃত হ’ল ভাবুক মানুষের জীবনে। অভিনিবেশ করে বস্তুতে ঘটনাতে নিবিষ্ট হবার শিক্ষা ও সাধনায় আপনার কার্যকরী ইন্দ্রিয়-শক্তি সকলকে নতুনতরো শক্তিমান করে তুল্লেন যে মুহূর্তে ভাবুক—সৌন্দর্যে অর্থে সম্পদে সৃষ্টির জিনিষ ভরে উঠলো, জগৎ এক অপরূপ বেশে সেজে দাঁড়ালো মানুষের মনের দুয়ারে; বারমহল ছেড়ে অভ্যাগত এল যেন অন্দরের ভিতর ভালবাসার রাজত্বে। রসের স্বাদ অনুভব করলে মানুষ, যেটা সে কিছুতে