পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

আসলে কানের বিষয় এখন সেটা ছাপার অক্ষরের মূর্তিতে চোখ দিয়েই যাচ্ছে সোজা মনের মধ্যে; ‘নবঘনশ্যাম’ এই কথাটা—ছাপা দেখলেই রূপ ও রং দুটোর উদ্রেক করে দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে!

 নাটক যখন পড়া হয় কিম্বা গ্রামোফোনের মধ্য দিয়ে শুনি তখন কান শোনে আর মন সঙ্গে সঙ্গেই নটনটীদের অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি মায় দৃশ্যপটগুলো পর্যন্ত চোখের কোন সাহায্য না নিয়েই কল্পনায় দেখে চলে, ছবির বেলায় এর বিপরীত কাণ্ড ঘটে,—চোখ দেখলে রূপের ছাপগুলো, মন শুনে চল্লো কানের শোনার অপেক্ষা না রেখে ছবি যা বলছে তা; বায়স্কোপের ধরা ছবি, চোখে দেখি শুধু তার চলা ফেরা, ছবি কিন্তু যা বল্লে সেটা মন শুনে নেয়।

 কবির মাতৃভাষা যদি বাঙ্গলা হয় তবে বাঙ্গলা খুব ভাল ক’রে না শিখলে ইংরেজ সেটি বোঝে না; তেমনি ছবির ভাষা অভিনয়ের ভাষা এসবেও দ্রষ্টার চোখ দোরস্ত না হলে মুস্কিল। মুখের কথা একটা না একটা রূপ ধরে আসে, কাগ্ বগ্ বল্লেই কালো সাদা দুটো পাখী সঙ্গে সঙ্গে এসে হাজির! শব্দের সঙ্গে রূপকে জড়িয়ে নিয়ে বাক্য যদি হল উচ্চারিত ছবি, তবে ছবি হল রূপের রেখার রংএর সঙ্গে কথাকে জড়িয়ে নিয়ে—রূপ-কথা, অভিনেতার ভাষাকেও তেমনি বলতে পারো রূপের চলা বলা নিয়ে চলন্তি ভাষা! কবিতার ছবির অভিনয়ের ভাষার মতো সুর আর রূপ দিয়ে বাক্যসমূহকে যথোপযুক্ত স্থান কাল পাত্র ভেদে অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মতো সাজিয়ে গুজিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে ছেড়ে দিলে তবেই যাত্রা সুরু ক’রে দিলে বাক্যগুলো, চল্লো ছন্দ ধরে, যথা—

“করিবর—রাজহংস-গতি-গামিনী
চললিহুঁ সঙ্গেত—গেহা
অমল তড়িত দণ্ড হেম মঞ্জরী
জিনি অপরূপ সুন্দর দেহা॥”

 কিন্তু বাক্যগুলোকে ভাষার সূত্রে নটনটী সূত্রধার এদের মতো বাঁধা হ’ল না, তখন কেবলি বাক্য সকল শব্দ করলে—ও, এ, হে, হৈ, ঐ কিম্বা খানিক নেচে চল্লো পুতুলের মতো কিন্তু কোন দৃশ্য দেখালে না বা কিছু কথাও বল্লে না, কোলাহল চলাচল হ’ল খানিক, বলাবলি হল না,