পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মাত্র একটা বনের দৃশ্যে বাচন মাত্র করে হাত গুটিয়ে বসলো—আর তো বাচন করবার কিছু পায় না। পক্ষীর চিক্‌ চিক্‌ বৃষের রব বীণার ঝনৎকার এ সবতো ছবিতে ধরা যায় না, বাকি সমস্তটা মরীচিকার মতো এই দেখতে এই নেই। এদের স্থিরতা দিয়ে ছবিতে ধরলে সমস্তটা মাটি। কিন্তু আধপাকা আর্টিষ্ট little learning বা স্বল্প শিক্ষা যাকে ভীষণ সমস্ত পরীক্ষায় ভুলিয়ে নিয়ে চলে, সে ‘অরণ্য’ কথাটি মাত্র ছবিতে বাচন করে খুসি হলো না; সে নির্বাচন করতে বসে গেল—যেন যা হচ্ছে, যেন যা দেখা যাচ্ছে এমনি নব ছায়ারূপ মায় কস্তুরীগন্ধী সোনার মৃগটাকে পর্যন্ত রং রেখার ফাঁদে ধরতে চল্লো মহা উৎসাহে। প্রজাপতিকে যেমন ছেলেরা কুঁড়োজালিতে ধরে সেই ভাবে সব ধরলে ছবিতে চিত্রভাষায় নীতিপরিপক্ব আর্টিষ্ট, কিন্তু দেখা গেল ধরা মাত্র সব চিত্র পুত্তলিকার মত কাঠ হয়ে রইলো, ঋষির গতিশীল বর্ণনা দুৰ্গতিগ্রস্ত হয়ে গিলটির ফ্রেমের ফাঁস গলায় দিয়ে অপঘাত মৃত্যু লাভ করলে। তারপর এল পাকা শিল্পীর পালা। সে ঋক্‌বেদের সূক্তটা হাতে পেয়েই তার সমস্ত রসটা মন দিয়ে পান করে ফেল্লে, তারপর ছবির শাদা কাগজে মোটা মোটা করে লিখলে—ছবি মানে Book illustration নয়, একমাত্র stage craft এই বর্ণনার illustration চিত্র শব্দ আলো ছায়া এবং নানা গতিবিধি ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে দিতে পারে নিখুঁতভাবে, আমি stage manager নই, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করবেন। কথাগুলো অরণ্যের সত্তাকে একদিক দিয়ে বোঝালে, ছবির ভাষা অন্যদিক দিয়ে তাকে বোঝাবে এই জানি, illustration চান্, না ছবি চান্ সেটা জান্‌লে এই পরীক্ষায় অগ্রসর হব ইতি—

 পুঃ—ঋষিরা এক জায়গায় বলেছেন ‘অন্যের রচনার সাহায্যে তোমরা স্তুতি করিও না,’ সুতরাং আমার নিজের মনোমতো রচনা দিয়ে আমি ঘরে গিয়ে অরণ্যের স্তুতি ছবি দিয়ে লিখে পাঠাবো মনে করেছি; বিদায়—।

 যে ছেলেটা সব চেয়ে জ্যেঠা, পরীক্ষক যদি পাকা হন তো জ্যেঠা হিসেবে তাকেই দেবেন ফুল মার্ক, আর কাঁচা যার পক্ষে ignorance bliss তাকে দেবেন পাস্ মার্ক, আর মাঝামাঝি ছেলেটিকে দেবেন শূন্য, এটা নিশ্চয়ই বলতে পারি। ছবি, কথা, ইঙ্গিত, সুর সার ইত্যাদি যদিও