পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পের সচলতা ও অচলতা
৭৩

বাদ্য কোথায় কান্না অকারণে! তারপর পতন ভূমিতে হঠাৎ—‘গালবাদ্য ঘন ঘন, সজল লোচন, প্রণাম যেমন বিধি’,—এমন গালবাদ্য কবিতা এইভাবে মনের সঙ্গে বিযুক্ত, শুধু কথার মারপেঁচ অভিধান অলঙ্কার নিয়ে কতটা কৃত্রিমভাবে গড়ে উঠলো দেখ—

“গালবাদ্য ঘন ঘন সজল লোচন 
প্রণাম যেমন বিধি
অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি প্রসীদ শঙ্কর বেদবিদাম্বর 
কৃপাময় গুণনিধি!”

এইবাব সব ছেড়ে মনকে দিলেন কবি খালি শব্দ দিয়ে কিছু রচনা করতে, চমৎকার শব্দ দিলে ভাষা—

“মহারুদ্ররূপে মহাদেব সাজে
ভবম্ভম্ ভবম্ভম্ শিঙ্গা ঘোর বাজে
লটাপট জটাজুট সংঘট্ট গঙ্গা
ছলচ্ছল টলট্টল কলকলতরঙ্গা।”

মনকে কবি চলতি ভাষার বাহনে চড়িয়ে ছেড়ে দিলেন, ভাষা ঝড় বইয়ে চল্লো এবারেও—

“দশদিক অন্ধকার করিল মেঘগণ
দুনো হয়ে বহে উনোপঞ্চাশ পবন।”

পঞ্চাশ এই শব্দটা বাতাস ধূলো কাঁকর আর বৃষ্টির একটা ঝাপটা দিয়ে গেল, উনো দুনো শব্দ দুটো থেকে থেকে বাতাসের সুর শুনিয়ে গেল, তারপরে একে একে ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি নাম্‌লো চেপে—

“ঝনঝনার ঝনঝনি বিদ্যুৎ চকমকি
হড়মড়ি মেঘের ভেকের মকমকি
ঝড় ঝড়ি ঝড়ের জলের ঝরঝরি।”

যদি আর্টিষ্টের মনের হাতে পড়ে, চলতি ভাষাও সাধু ভাষার বিনা সাহায্যেই এমন সুন্দর ভাবে চলতে পারে, তবে কালীঘাটের পটের ভাষাকে চলতি বলে তুচ্ছ করা তো যায় না। আর্টিষ্টের হাতে এই পটের ভাষা যে সুন্দর হয়ে উঠতে পারে না, তা কেমন করে বলা যায়! জাপানের প্রসিদ্ধ চিত্রকর হকুসাই এই পটের ভাষাতে যে চমৎকার চিত্র সব লিখে