পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সুরূপ শ্যামসুন্দর দেখেছিলেন, তারপর অনঙ্গভীমদেব এবং তারপর থেকে আমাদের সবার কাছে রূপকসুন্দর ভাবে কৃষ্ণ এলেন, এই দুই মূর্তিই আমাদের শিল্পে ধরা হয়েছে, এখন কোন্ সমালোচকের সৌন্দর্য সমালোচনার উপর নির্ভর করে’ এই দুই মূর্তির বিচার করবো? আ-কা-শ এই তিনটে অক্ষরে আকাশ জ্ঞানটাই রূপকের দল বলবে ভাল, কিন্তু রূপের সেবক তারা বলবে ‘নব-নীরদ-শ্যাম’ যা দেখে চোখ ভুল্লো মন ঝুরলো, যার মোহন ছায়া তমাল গাছে যমুনার জলে এসে পড়লো সেই সুন্দর। সুন্দর অসুন্দর সম্বন্ধে শেষ কথা যদি কেউ বলতে পারে তো আমাদের নিজের নিজের মন। পণ্ডিতের কাযই হচ্ছে বিচার করা এবং বিচার করে দেখতে হলেই বিষয়কে বিশ্লেষ করে দেখতে হয়, সুতরাং সুন্দরকেও নানা মুনি নানা ভাবে বিশ্লেষ করে দেখেছেন, তার ফলে তিল তিল সৌন্দর্য নিয়ে তিলোত্তমা গড়ে’ তোলবার একটা পরীক্ষা আমাদের দেশে এবং গ্রীসে হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের মন সেই প্রথাকে সুন্দর বলে’ স্বীকার করেনি এবং সেই প্রথায় গড়া মূর্তিকেই সৌন্দর্য-সৃষ্টির শেষ বলেও গ্রাহ্য করেনি। বিশেষ বিশেষ আর্টের পক্ষপাতী পণ্ডিতেরা ছাড়া কোন আর্টিষ্ট বলেনি অন্য সুন্দর নেই, ঐটেই সুন্দর। আমাদের দেশ যখন বল্লে—সুন্দর গড়ো কিন্তু সুন্দর মানুষ গড়ো’ না, সুন্দর করে’ দেবমূর্তি গড়ো সেই ভাল, ঠিক সেই সময় গ্রীস বল্লে—না, মানুষকে করে’ তোল সুন্দর দেবতার প্রায় কিম্বা দেবতাকে করে’ তোল প্রায় মানুষ! আবার চীন বল্লে—খবরদার, দেবভাবাপন্ন মানুষকে গড়ো তো দৈহিক এবং ঐহিক সৌন্দর্যকে একটুও প্রশ্রয় দিও না চিত্রে বা মূর্তিতে। নিগ্রোদের আর্ট, যার আদর এখন ইউরোপের প্রত্যেক আর্টিষ্ট করছে তার মধ্যে আশ্চর্য রং রেখার খেলা এবং ভাস্কর্য দিয়ে আমরা যাকে বলি বেঢপ বেয়াড়া তাকেই সুন্দরভাবে দেখানো হচ্ছে।

 সুতরাং সুন্দরের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র আদর্শ আর্টিষ্টের নিজের নিজের মনে ছাড়া বাইরে নেই, কোন কালে ছিল না, কোন কালে থাকবেও না এটা একেবারে নিশ্চয় করে’ বলা যেতে পারে। সুন্দর যদি খিচুড়ি হ’তো তবে এতদিনে সৌন্দর্যের তিল ও তাল মিলিয়ে কোন এক বেরসিক পরম সুন্দর করে সেটা প্রস্তুত করে’ যেতো তথাকথিত কলারসিকদের জন্য, কিন্তু একমাত্র যাঁকে মানুষ বল্লে ‘রসো বৈ সঃ’ তিনিও সুন্দরের