পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাখীর কথা
১০৭

তাহাদের তথাকথিত সভ্যতাকে শ্বাপদচরিত্রের রূপ দান করিয়াছে। সেইজন্য তাহারা মারণাস্ত্রের অনুসন্ধান ও আবিষ্কারে সুপটু। যে জাতি তাহাদেরই মত অস্ত্রবলে বলীয়ান ও সামরিক বৃত্তিতে নিপুণ নহে, অধুনা জগতে সে জাতির স্বাধীন অস্তিত্বের কোনও মূল্য নাই। এশিয়া ভূখণ্ডের একমাত্র জাপানীরা শিক্ষাদ্বারা সামরিকবুদ্ধি প্রখর করিয়া তুলিয়াছিল।

 ভারতবর্ষে আজ সামরিক, নাবিক ও অন্যান্য বিভাগে বহু সুদক্ষ লোকের প্রয়োজন হইবে; কিন্তু আমাদের ছেলেদের মধ্যে পর্য্যবেক্ষণ শক্তি যদি বৃদ্ধি না করা যায় তবে এই সব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব হইবে। ইংরাজ এদেশে থাকিতে গত ত্রিশ বৎসরে শিক্ষাপদ্ধতিকে এমন একটা রূপ দান করিয়া গিয়াছে যে আমাদের ছেলেদের মধ্যে চপলতা বৃদ্ধি পাইয়াছে, চিন্তার গভীরতা হ্রাস পাইয়াছে। কেননা, বিদ্যালয়েও শিক্ষায়তনে শিক্ষার ভড়ংকে প্রাধান্য বেশী দেওয়া হইয়াছিল।

 “নেচার ষ্টাডি” বা প্রকৃতি-পরিচয় এদেশের প্রত্যেক স্কুলের পাঠ্য মধ্যে স্থান পায়। কিন্তু এই দরিদ্র দেশে সহজে, অল্প খরচে অথচ যথেষ্ট আনন্দবর্দ্ধকভাবে প্রকৃতি-পরিচয় শিক্ষালাভের চেষ্টা নাই। পক্ষী পর্য্যবেক্ষণ যদি প্রতি বিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকায় স্থান পায় তবে, অল্প খরচে প্রত্যেক স্কুলেই ছেলেরা শুধু যে বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিতে শিক্ষিত হইতে পারে তাহা নহে, তাহাদের চিত্তের স্থৈর্য্য, চিন্তা করার শক্তি ও দৃষ্টির গভীরতা বৃদ্ধি পাইতে পারে।

 অবশ্য এজন্য শিক্ষকদের শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে। তজ্জন্য তাহাদিগকে জুওলজীতে ওস্তাদ হইতে হইবে না। বাংলা দেশে কৌতুহলী শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের জন্য পক্ষিতত্ত্ব সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক আতিশয্যবর্জ্জিত বই পাখী সম্বন্ধে নাই। এই পুস্তকটি সেই অভাব পূরণের একটা প্রয়াস মাত্র।