পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাক
২৭

আসিয়া উপবেশন করিতে দেখিলেই, গরু, বলদ বা মহিষ তাহার দিকে মুখ বাড়াইয়া দিয়া নিমীলিত নয়নে অপেক্ষা করে, কাক ইঙ্গিত বুঝিয়া ঐ চতুষ্পদের নাসারন্ধ্রের, নিজ চঞ্চু প্রবেশ করাইয়া দেয়—এরূপ দৃশ্য অনেকেই বোধ হয় লক্ষ্য করিয়া থাকিবেন। ইহা শুধু যে গোসেবাপরায়ণ, তাহা নহে। ইহা কৃষকের মিত্র। পঙ্গপালের ঝাঁক যখন কৃষকের হৃৎকম্প আনয়ন করে, তখন শালিক প্রভৃতি পাখীর সঙ্গে কাকও সেই পঙ্গপালচমূ আক্রমণপূর্ব্বক তাহা বিধ্বস্ত করিতে তৎপর হয়, এ কথা বিশেষজ্ঞ লক্ষ্য করিয়াছেন।

 কিন্তু এত গুণ সত্ত্বেও খেচরসমাজে কাকের যথেষ্ট অপযশ আছে এবং সে জন্য ইহাদিগকে বেশ উপদ্রুত হইতে হয়। পক্ষিডিম্বের ও পক্ষিশাবকের সুকোমল মাংসের লোভ কাক সম্বরণ করিতে পাবে না। সেই জন্য ইহাকে সকলেই সন্দেহের চোখে দেখে। পক্ষীসমাজের বড় দারোগা, ফিঙ্গে, কাক দেখিলেই আক্রমণ করে। কাক, ফিঙ্গে অপেক্ষা আয়তনে বড় হইলেও, কাপুরুষ। ফিঙ্গের সামনে পড়িলে সে পলাইবার পথ পায় না। এমন কি শালিক পাখীর কাছেও অপমানিত হইয়া সরিয়া পড়িতে ইহাকে দেখা যায়!

 আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে যদিও ক্ষুদ্রতর ফিঙ্গে ও শালিকের সহিত কাক আঁটিয়া উঠিতে পারে না, উহাপেক্ষা বৃহত্তর ও অধিকতর শক্তিশালী চিল কাকের নিকট জব্দ থাকে। দুইটি কাক মিলিয়া চিলের নিকট হইতে প্রায়ই খাদ্য কাড়িয়া লইয়া যায় এবং আকাশপথে চিলকে নিকট দিয়া যাইতে দেখিলেই কি জানি কেন তাহাকে তাড়া করিবার ইচ্ছা কাকের মনে জাগ্রত হয়। চিল বলশালী পাখী হইলেও কাককে এড়াইয়া পলায়ন করাই সঙ্গত মনে করে। পক্ষীতত্ত্বের লেখক ডগলাস ডেওয়ার সাহেব একদল কাক কর্ত্তৃক চিলের বাসা আক্রমণপূর্ব্বক তাহাকে আহত বিধ্বস্ত করিয়া দেওয়ার এক চিত্তাকর্ষক বর্ণনা দিয়াছেন।