পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শালিক

 কাকের মত শালিক আমাদের নিত্যসহচর। সুতরাং ইহার সহিত অপরিচিত বাঙ্গালী বোধ হয় নাই। কালো মাথা, বাদামী রঙের এই পাখীটি সর্ব্বদা সর্ব্বত্র বর্ত্তমান। কাকের মতই ইহা দুঃসাহসী, যদিও কাকের মত চৌর্য্য-পরায়ণ নহে। ইহার চলাফেরা, স্বভাব, হাবভাব, ভঙ্গী অতিশয় কৌতূহলপ্রদ।

 ইহাদের কর্ণমূলের পীতবর্ণ লোমহীন স্থানটির জন্য ময়না পাখীর সঙ্গে ইহার সাদৃশ্য আছে বলিয়া মনে হয়। উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে তো ইহার নামই “ময়না”। ইংরেজ লেখকরা তাঁদের পুস্তকাদিতে হিন্দুস্থানী নামই গ্রহণ করিয়া থাকেন—সেইজন্য ইহার ইংরেজী নাম “দি কমন ময়না”। কিন্তু বাঙ্গালী যে কৃষ্ণবর্ণ, পীতকর্ণ মনুষ্যভাষা-কুশলী পাখীকে “ময়না” বলেন, সে পাখীটি পার্ব্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা, সুতরাং শালিক হইতে ভিন্ন। খাঁচার ভিতর ছাড়া “ময়না”র সঙ্গে আমাদের পরিচয় দুঃসাধ্য। এই শালিক বোধ হয় সংস্কৃত সাহিত্যের “সারিকা”।

 শালিককে উভচর বলিলে অন্যায় হইবে না। ইহা বেশ বেগের সহিত উড়িতে পারে; সুতরাং ইহার ডানায় বেশ শক্তি আছে। আবার জমির উপর হল্‌দে পা দুখানি একটির পর একটি ফেলিয়া বেশ সাবলীলভাবেই বিচরণ করিতে পারে। খুব কম বৃক্ষবিহারী পাখীই ভূমির উপর অবলীলাক্রমে চলিতে পারে। যাহাদের পদদ্বয় হ্রস্ব হয় তাহারা মাটির উপর চলিতে পারে না—যেমন বুলবুল। কিন্তু যে সব পাখী মাটির উপর বিচরণ করে তাহাদের জানুর নিম্নভাগ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ হয়। শালিক এই শেষোক্ত পর্য্যায়ের পাখী।