পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

ঠিক হয়। ইহার মাথাটি কৃষ্ণবর্ণ, চঞ্চু ও চরণ পীত এবং কাণের পাশে খানিকট স্থান লোমহীন ও সেখানের চামড়া হলদে। বাকী শরীরটা বাদামী। ডানার ভিতরকার পালক সাদা ও লেজের অগ্রভাগ ও নীচের দিকটা সাদা। ডানা গুটাইয়া যখন মাটির উপর সে বিচরণ করে তখন সাদা অংশগুলি নজরে পড়ে না—উড়ামাত্র মনে হয় পাখীর শরীরের অনেকখানি যেন সাদা।

 আর একটি শালিকও আমাদের দেশে সর্ব্বত্র অধিক সংখ্যায় নজরে পড়ে। এরা মানুষের গৃহাঙ্গনে আসিলেও গৃহমধ্যে বড় একটা অসে না। ইহাদের পাড়াগাঁয়ে গুয়েশালিক বা গোশালিক বলে। সাধারণ শালিকের মত ইহার রং অত ঘন বাদামী নহে, হালকা বাদামী এবং বহু শ্বেত রেখায় ইহার অবয়ব বিচিত্রিত। ইংরেজ একে “দি পায়েড ময়না” বলে। ইহা কিন্তু কোটরে বাসা নির্ম্মাণ করে না। তাল খর্জ্জুর, সুপারী প্রভৃতি বৃক্ষের ডালের গোড়ায় একটা বৃহৎ বাসা খড়কাঠি দিয়া তৈরী করে। বাসাটি অত্যন্ত পারিপাট্যহীন হয়।

 নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর ধারে আর একটি শালিক থাকে। ইহাকে গাঙশালিক বলে। সাধারণ শালিকের মতই দেখিতে এবং আয়তনেও উহার সমান, দেহবর্ণ বাদামীরব দলে গাঢ় ধূম্রবর্ণ (ডার্ক গ্রে), মাথার কালো রং স্কন্ধ পর্য্যন্ত বিস্তৃত। এবং চোখের চারিদিকের চর্ম্ম হলদের বদলে উজ্জ্বল লাল। নদীর উচ্চ পাড়ে অনেক সময় একই স্থানে বহু গর্ত্ত পরিলক্ষিত হয়। এই সকল গর্ত্তই ইহাদের নীড়। অনেকগুলি পাখী কলোনী স্থাপন করিয়া শাবকোৎপাদন করে। গর্ত্তের মুখ হইতে চার পাঁচ হাত দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খনন করিয়া তাহার শেষ প্রান্তে গোলাকার গুহা করিয়া লয়। তন্মধ্যে ঘাস, পাখীর পালক, ছিন্নবস্ত্র এমন কি সাপের খোলস দিয়া গদী রচনা করে। উপরে বর্ণিত সব কয়প্রকার শালিকেরই ডিম নীল বর্ণের হয়।