পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

হয় না। এই অত্যন্ত পেটুক সন্তানদের খাদ্য জোগাইতে ইহাদের জনকজননী মোটেই আলস্য বা বিরক্তি বোধ করে না। শৈশবে বাপমা যতই সন্তান বৎসল হউক না কেন, চলিতে ও উড়িতে শিখিলে অর্থাৎ স্বোপার্জ্জনে সক্ষম হইলে বাপ মা বাচ্চাদের দূর করিয়া দেয়। সুতরাং নীলকণ্ঠ কিরূপ অসামাজিক পাখী বলাই বাহুল্য।

 পক্ষিতত্ত্বের পণ্ডিতগণ নীলকণ্ঠের সহিত মাছরাঙার একটা গোত্র সম্বন্ধ আছে বলিয়া মনে করেন। কেননা অনেক বিষয়েই এই দুইটী পাখীর সাদৃশ্য দেখা যায়। কোনও এক বিস্তৃত আদিম যুগে ইহারাও মাছরাঙা শ্রেণীভুক্ত জলচর পাখী ছিল। ক্রমশঃ স্বভাবের পরিবর্ত্তনে মাছরাঙা সম্প্রদায় হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে। একজন ইংরেজ লেখক বলেন তিনি ইহাকে জলের উপর মাছরাঙার মত একই স্থানে ডানা ঝাপটিয়া জলের মধ্যে ঝপাৎ করিয়া ছোঁ মারিতে দেখিয়াছেন (গর্ডন ডালগ্লীশ)। বহু পাখী স্নানপ্রিয় হয়, তবে কেহ বা জলে স্নান করে কেহ বা ধূলায়। মুরগী, তিতির, ভরত প্রভৃতি পাখীর মত নীলকণ্ঠ ধূলিতে শরীর পরিমার্জ্জিত করে।

 মাছরাঙার মতই ইহারা গর্ত্তমধ্যে বাসা নির্ম্মাণ করে ও শুভ্র ডিম পাড়ে। অবশ্য এই দুইটী সাদৃশ্য বিশেষভাবে জ্ঞাতিত্ব পরিচায়ক নহে। এতদ্ব্যতীত দেখা যায় ইহাদের উভয়েরই স্বর কর্কশ ও উচ্চগ্রামের। উভয় পাখীই নিঃসঙ্গ থাকিতে ভালবাসে এবং উভয়েরই খাদ্যান্বেষণ প্রণালী একরূপ। কোনও উচ্চস্থানে চুপ করিয়া নিম্নদিকে খাদ্যের জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখাই ইহাদের রীতি—অবশ্য একটা ভূমি হইতে আহার্য্য কুড়াইয়া লয়, অপরটা জল হইতে ছোঁ মারিয়া লয়। মাছরাঙার কথা যখন আলোচনা করিব তখন দেখিব যে আমাদের দেশের পরিচিত মাছরাঙা পাখীগুলির মধ্যেও একটী জাতি নীলকণ্ঠের মত স্থলচরে বিবর্ত্তিত হইবার পথে চলিয়াছে।