পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ফিঙ্গে
৭৫

বিলাতী শ্বেতাঙ্গের মত। অপর জাতীয় কোনও পাখী ফিঙ্গে সম্বন্ধে অকারণ কৌতুহল প্রকাশ করিলে অবিলম্বে ফিঙ্গে তাহকে ভদ্রতা শিখাইয়া দেয়। চৌর্য্যকুশল বায়সকে ফিঙ্গে মহাশয় মোটেই সহ্য করিতে পারে না। তাহার বাসার পাশ দিয়া কাককে উড়িয়া যাইতে দেখিলে ফিঙ্গের মেজাজ তিরিক্ষি হইয়া উঠে। ফিঙ্গে দম্পতি তখন মিলিত আক্রমণে সুতীক্ষ্ণ চঞ্চু ও নখরাঘাতে কাকের পৃষ্ঠদেশ ক্ষতবিক্ষত করিয়া দেয়। কাক এমনই কাপুরুষ যে সে তাহার অতবড় শরীর সত্ত্বেও ফিঙ্গেকে দেখিতে পাইলে পলাইতে পথ পায় না। ইংরেজ ফিঙ্গেকে “কিং ক্রো” এবং “ব্ল্যাঙ্ক ড্রোঙ্গো” এই উভয় নামে অভিহিত করে। সংস্কৃত বৃহৎ-সংহিতায় কাকবিরোধী “চাষ” পাখীর উল্লেখ আছে। এই “চাষ” সম্ভবতঃ ফিঙ্গে।

 জ্যৈষ্ঠমাসের প্রারম্ভ হইতে ফিঙ্গে নীড় নির্ম্মান আরম্ভ করে। খুব উচ্চ গাছের মাঝামাঝি বা উপরদিকের দুইটি শাখার সন্ধিস্থলে ডালের উপর ইহারা নীড় স্থাপন করে। ইহাদের বাসা শূন্যে দোদুল্যমান হয় না। কিছু শুষ্ক ঘাস, খুব সূক্ষ্ণ লতাতন্তু শিকড় একত্র করিয়া ডালের উপর গদির মত সাজায়। তারপর মাকড়সার জালের মিহিতন্তু জোগাড় করিয়া এই গদিটিকে তদ্বারা জড়াইয়া ডালের সঙ্গে আঁটিয়া বাঁধে। অবশেষে উক্ত গদির উপর ফিঙ্গে ও ফিঙ্গেজায়া উভয়ে ঘুরিয়া ঘুরিয়া শরীরের চাপে উহাকে ঠাসিয়া মাটির প্রদীপের মত একটি ছোট আধার প্রস্তুত করে। এই আধারটি ফিঙ্গেজায়ার আঁতুড় ঘর হয়। তিনি ইহার মধ্যে তিন চারিটি শুভ্র বা ঈষৎ লাল আভাযুক্ত ডিম পাড়েন। ডিমের গায়ে অতি ক্ষুদ্র রক্ত বা বাদামী বর্ণের ছিটে থাকে।

 সন্তানজননের সময় ফিঙ্গের স্বভাবতঃ রুক্ষ্ম মেজাজ আরও রুক্ষ্ম হইয়া উঠে। এই সময়ে সে এমন দুর্দ্ধর্ষ হয় যে চিলের মত বড় ও হিংস্র পাখীকেও বাসার কাছে দেখিলে ধাওয়া করে। বাংলার ব-দ্বীপে জলা-