পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১৫৩

প্রকাশ করিয়াছিলেন (রঙ্গপুর সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ৫ম ভাগ, পৃঃ ৭০-৭৪)। এই মুদ্রাদ্বয় পাণ্ডুনগর নামক স্থানে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রথম মুদ্রাটি শ্রীমহেন্দ্রদেবের এবং দ্বিতীয় মুদ্রাটি দনুজমর্দ্দনদেবের নামাঙ্কিত। ইতিপূর্ব্বে দনুজমর্দ্দন বা মহেন্দ্রদেবের কোন মুদ্রা আবিষ্কৃত হয় নাই। উভয় মুদ্রাতেই শকাব্দের তারিখ ছিল, কিন্তু মুদ্রাদ্বয়ের পার্শ্ব কাটিয়া যাওয়ায় রাজদ্বয়ের কালনির্ণয় হয় নাই।

 কিছুকাল পূর্ব্বে খুলনা জেলার বাসুদেবপুর গ্রামনিবাসী জনৈক মুসলমান কবরখননকালে একটি রজতমুদ্রা আবিষ্কার করিয়াছিল। সে ঐ মুদ্রাটি উক্ত গ্রামনিবাসী শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়কে দিয়াছিল। খুলনা দৌলতপুর কলেজের অধ্যাপক শ্রীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র মহাশয় এই মুদ্রাটি সংগ্রহ করিয়া আনিয়া আমাকে দেখাইয়াছিলেন। এই মুদ্রাটি দনুজমর্দ্দনদেবের এবং ইহা ১৩৩৯ শকাব্দে মুদ্রিত হইয়াছিল। অধ্যাপক শ্রীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র ও আমি মুদ্রার পাঠোদ্ধার করিয়া উহা চন্দ্রদ্বীপে মুদ্রাঙ্কিত স্থির করিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি পূর্ব্ববঙ্গে দনুজমর্দ্দনদেবের বহু রজতমুদ্রা আবিষ্কৃত হওয়ায় সেই মতের পরিবর্ত্তনের আবশ্যক হইয়াছে। বাসুদেবপুরে দনুজমর্দ্দনদেবের মুদ্রা আবিষ্কৃত হইলে আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম যে, বাসুদেবপুরের মুদ্রা ও পাণ্ডুয়ার নিকটে আবিষ্কৃত মুদ্রা একই রাজার এবং দনুজমর্দ্দনদেবের প্রকৃত তারিখ ১৩৩৯ শকাব্দ অর্থাৎ ১৪১৭ খৃষ্টাব্দ। বাসুদেবপুরের মুদ্রার সহিত ৺রাধেশচন্দ্র শেঠ কর্ত্তৃক প্রদর্শিত পাণ্ডুয়ায় আবিষ্কৃত দনুজমর্দ্দনদেবের মুদ্রার চিত্রের তুলনা করিয়া অধ্যাপক সতীশচন্দ্র মিত্র এবং আমি স্থির করিয়াছিলাম যে, পাণ্ডুনগর ও চন্দ্রদ্বীপ উভয় টাঁকশালের মুদ্রাই দনুজমর্দ্দনদেব কর্ত্তৃক ১৩৩৯ শকাব্দে মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছিল। দনুজমর্দ্দনদেবের প্রকৃত কাল নির্ণীত হইলে চন্দ্রদ্বীপের কায়স্থ রাজবংশের ইতিহাসের কিছু পরিবর্ত্তন আবশ্যক হইয়াছিল। ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দে শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু এসিয়াটীক্ সোসাইটীর পত্রিকায় বাঙ্গালার সেন রাজবংশ সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই প্রবন্ধে তিনি বলিয়াছেন যে, কেশবসেনের পরে সদাসেন নামক একজন রাজা অষ্টাদশ বর্ষকাল রাজত্ব করিয়াছিলেন এবং সদাসেনের পরে নৌজা নামক একজন রাজা সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন, এই কথা আবুল-ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায়। হরিমিশ্র ঘটক-প্রণীত কারিকায় দনোজামাধব নামক জনৈক পরাক্রান্ত রাজার নাম দেখিতে পাওয়া যায়।