পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
৯৩

 অনুমান হয় যে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের জ্যেষ্ঠপুত্র প্রথম কুমারগুপ্তের বংশলোপ হইলে, তাঁহার দ্বিতীয়পুত্র গোবিন্দগুপ্ত বা কৃষ্ণগুপ্তের বংশধরগণ পাটলিপুত্রের সিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন। ইঁহারা এই সময়ে গৌড়দেশের অধিকারী ছিলেন কি না তাহা বলিতে পারা যায় না। গোবিন্দগুপ্ত বা কৃষ্ণগুপ্তের পৌত্র তৃতীয় কুমারগুপ্ত বোধ হয় এই বংশের প্রথম রাজা। তাঁহার কোন শিলালিপি বা তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয় নাই। কিন্তু তাঁহার বৃদ্ধপ্রপৌত্র আদিত্যসেনের শিলালিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে, তিনি ঈশানবর্ম্মা নামক জনৈক নরপতিকে পরাজিত করিয়াছিলেন এবং প্রয়াগে চিতারোহণ করিয়াছিলেন[১]। এই ঈশানবর্ম্মা সম্ভবতঃ মৌখরীবংশীয় রাজা ঈশানবর্ম্মা। ঈশানবর্ম্মার একখানি শিলালিপি বড়বাঁকি জেলায় হড়াহা গ্রামে আবিষ্কৃত হইয়াছে। এই শিলালিপি হইতে জানা যায় যে, ঈশানবর্ম্মা সমুদ্রতীরবাসী গৌড়গণকে স্বাধিকার মধ্যে থাকিতে বাধ্য করিয়াছিলেন[২]। হড়াহা গ্রামের শিলালিপি ৬১১ বিক্রম সম্বৎসরে (৫৫৪ খৃঃ অব্দ) উৎকীর্ণ হইয়াছিল[৩] সুতরাং ঈশানবর্ম্মার গৌড়বিজয় এবং তৃতীয় কুমারগুপ্তের সহিত তাঁহার যুদ্ধ খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম বা দ্বিতীয় পাদে ঘটিয়াছিল। ভানুগুপ্ত যখন ২১৪ গৌপ্তাব্দে (৫৩৩ খৃঃ অব্দ) জীবিত ছিলেন, তখন ইহা স্বীকার করিতে হইবে যে, তৃতীয় কুমারগুপ্ত খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়পাদের মধ্যভাগে সিংহাসনলাভ করিয়াছিলেন। অতএব ইহা অনুমান করা যাইতে পারে যে, ষষ্ঠ শতাব্দীর

  1. Fleet’s Corpus Inscriptionum Indicarum, Vol. III, p. 203.
  2. কৃত্বা চায়তি মৌচিত স্থলভুবো গৌড়ান্ সমুদ্রাশ্রয়া-
    নধ্যাসিষ্ট নতক্ষিতীশচরণঃ সিংহাসনং যোজিতী॥—

    —Epigraphia Indica, Vol. XIV, p. 117.

  3. Ibid, p. 118.