পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
বাঙ্গালার ইতিহাস।

পুলকেশী কর্ত্তৃক হর্ষবর্দ্ধনের পরাজয় এবং কলিঙ্গ ও কোশল বিজয় ঘটিয়াছিল[১], কিন্তু ইউয়ান্‌-চোয়াং লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার চীনদেশের প্রত্যাগমনের অব্যবহিত পূর্ব্বে অর্থাৎ ৬৪২ বা ৬৪৩ খৃষ্টাব্দে কুমার ভাস্করবর্ম্মা তাঁহাকে কামরূপে আহ্বান করিয়াছিলেন। এই সময়ে হর্ষবর্দ্ধন কোঙ্গোদমণ্ডলে যুদ্ধাভিযান শেষ করিয়া আর্য্যাবর্ত্তে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছিলেন[২], সুতরাং শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে শৈলোদ্ভববংশীয় সৈন্যভীত মাধববর্ম্মা অথবা তাঁহার পুত্র চালুক্যরাজের সাহায্যে হর্ষের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলেন।

 পরিব্রাজক ইউয়ান্‌-চোয়াং নানাস্থানে শশাঙ্কের বৌদ্ধ-বিদ্বেষের কথা উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু বৌদ্ধতীর্থ বা বৌদ্ধাচার্য্যগণের প্রতি শশাঙ্কের অত্যাচারের কাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসযোগ্য নহে। ইহার প্রথম কারণ এই যে, চৈনিক শ্রমণের ধর্ম্মমত অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ ছিল এবং তিনি স্বধর্ম্মিগণের প্রতি সর্ব্বত্র অযথা পক্ষপাত প্রদর্শন করিয়াছেন। দ্বিতীয় কারণ এই যে, শশাঙ্কের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেও বঙ্গে ও মগধে বহু মন্দির, বিহার, সঙ্ঘারামাদি বিদ্যমান ছিল। ইউয়ান্-চেয়াং যাহা লিখিয়াছেন, তাহা যদি সত্য হইত, বৌদ্ধধর্ম্মের বিলোপসাধনে কৃতসঙ্কল্প হইয়া শশাঙ্ক যদি বৌদ্ধতীর্থসকলের ধ্বংসসাধনে প্রবৃত্ত হইতেন, তাহা হইলে পরিব্রাজক স্বয়ং শশাঙ্কের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে গৌড়ে, রাঢ়ে ও মগধে সমৃদ্ধ ও জনপূর্ণ সঙ্ঘারাম ও বিহারাদি দেখিতে পাইতেন না। শশাঙ্ক কর্ত্তৃক বোধিদ্রুম বিনাশ, কুশীনগরে ও পাটলিপুত্রে বৌদ্ধকীর্ত্তি ধ্বংস প্রভৃতি কার্য্যের বোধ হয়, অন্য কোন কারণ ছিল। বৌদ্ধধর্ম্মানুরক্ত স্থাণ্বীশ্বররাজের অনুকূলাচরণের জন্যই বোধ হয় শশাঙ্ক বুদ্ধগয়া,

  1. Epigraphia Indica, Vol. VI, p. 3.
  2. Watters’ On-Yuan-Chwang, Vol. I, p. 349.