পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বাঙ্গালার ইতিহাস।

ঘনরামের ধর্ম্মমঙ্গল ইহার বহু পরে রচিত হইয়াছিল। গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপালদেবের রাজত্বকালে হরিভদ্র ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতার’ টীকায় বলিয়া গিয়াছেন যে, ধর্ম্মপাল “রাজভটাদিবংশপতিত[১]।” হরিভদ্র ধর্ম্মপালদেবের সমসাময়িক ব্যক্তি; সুতরাং তাঁহার উক্তি সন্ধ্যাকরনন্দীর রামচরিত, ঘনরামের ধর্ম্মমঙ্গল ও বৈদ্যদেবের কমৌলী তাম্রশাসনাপেক্ষা অধিকতর প্রামাণিক হওয়া উচিত। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসুর মতানুসারে ধর্ম্মপাল বঙ্গের খড়্গবংশীয় রাজা দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজভট্টের বংশজাত। বসুজ মহাশয় বলিয়াছেন,—“এই কয়টি

  1. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ১৪৭। হরিভদ্রের ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা-টীকায়’ ধর্ম্মপালদেব সম্বন্ধে ‘রাজভটবংশপতিত’ শব্দটি আছে, এই সংবাদ শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর নিকট পাইয়াছিলেন। নেপালে কাঠমণ্ডু নগরে ‘বীর লাইব্রেরী’ নামক গ্রন্থাগারে হরিভদ্র-বিরচিত ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা-টীকার’ একখানি প্রাচীন পুথি আছে, পুথিখানি তালপত্রে লিখিত এবং মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের মতানুসারে পুথিখানির বয়স সাত আট শত বৎসর হইবে। এই গ্রন্থের দ্বাত্রিংশ অধ্যায়ের শেষে নিম্নলিখিত শ্লোকটি লিখিত আছে;—

    রাজ্যে রাজভটাদিবংশপতিত শ্রীধর্ম্মপালস্য বৈ।
    তত্ত্বালোকবিধায়িনী বিরচিতা সৎপঞ্জিকেয়ং ময়া॥

    এই গ্রন্থের পুষ্পিকা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, টীকাটি হরিভদ্র-বিরচিত,—

     অভিসময়ালঙ্কারাবলোকেত্যষ্টসাহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা ব্যাখ্যা সমাপ্তা। কৃতিরিয়ং আচার্য্যহরিভদ্রপাদানাং।

     মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী অনুমান করেন যে, ‘রাজভটাদিবংশপতিত’ শব্দে রাজভট প্রভৃতির সহিত পালবংশের অতি দূর-সম্পর্ক সূচিত হয়। কিন্তু ইহার অর্থে গোপাল বা ধর্ম্মপালকে রাজভটের বংশধর বলা যাইতে পারে না। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রামচরিত সম্পাদনকালে বলিয়াছেন যে, পালরাজগণ সম্ভবতঃ রাজভটের কোন সেনাপতির বংশজাত; Dharmapala is described by Haribhadra as belonging to the family of a military officer of the same king.—Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 6.