পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১৬৫

প্রমাণ দ্বারা আমরা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি যে, গোপাল ও ধর্ম্মপাল প্রথমতঃ গৌড়বাসী ছিলেন না, মূলতঃ বঙ্গবাসী ছিলেন এবং বঙ্গের রাজভটের বংশে উদ্ভূত হইয়াছিলেন[১]।” চীনদেশীয় পরিব্রাজক সেঙ্গ-চি ৬৫০ হইতে ৬৫৫ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন সময়ে রাজভটকে সমতট বা বঙ্গের সিংহাসনে দেখিয়াছিলেন। চীন-পরিব্রাজক ই-চিং ৬৭৩ খৃষ্টাব্দে তাম্রলিপ্তি নগরে আগমন করিয়াছিলেন। তিনি তাঁহার ভ্রমণবৃত্তান্তে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন যে, তৎপূর্ব্বে সেঙ্গ-চি নামক তাঁহার একজন স্বদেশবাসী জলপথে সমতটে আগমন করিয়াছিলেন[২]। বসুজ মহাশয় স্থির করিয়াছেন যে, খড়্গবংশীয় দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজভট্ট এবং চীন-পরিব্রাজক-বর্ণিত সমতটরাজ রাজভট একই ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে বসুজ মহাশয় বলিয়াছেন, “কেহ কেহ এই রাজভটের পিতার তাম্রশাসনলিপির আলোচনা করিয়া তাঁহাকে খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর লোক বলিতে চান। কিন্তু অক্ষর দেখিয়া ইহার কাল-নির্ণয় সমীচীন হয় নাই[৩]।” দেবখড়্গের কাল-নির্ণয়-প্রসঙ্গে যথাস্থানে অক্ষর-তত্ত্বের প্রমাণের মূল্য আলোচিত হইবে। এইস্থানে এইমাত্র বলা যাইতে পারে যে, অক্ষর-তত্ত্বের প্রমাণানুসারে দেবখড়্গ ধর্ম্মপালদেবের পূর্ব্ববর্ত্তী নহেন, সুতরাং দেবখড়্গের পুত্র রাজভট বা রাজরাজভট্ট কখনই ধর্ম্মপালদেবের পিতা গোপালদেবের পূর্ব্বপুরুষ হইতে পারেন না। দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজভট্ট কখনই খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর ব্যক্তি হইতে পারেন

  1. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ১৪৭।
  2. Jyan Takakusuʼs I-tsing, শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু কর্ত্তৃক ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’, রাজন্যকাণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত; বসুজ মহাশয় পাদটীকায় পত্রাঙ্ক প্রদান করেন নাই।
  3. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, রাজন্যকাণ্ড, পৃঃ ১৪৭, পাদটীকা ৭।