পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
বাঙ্গালার ইতিহাস।

হইলে নব-প্রতিষ্ঠিত পালবংশের অধিকার বোধ হয় গোপালদেবের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হইত। তাহা হইলে গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপাল কখনই সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত জয় করিয়া চক্রায়ুধকে কান্যকুব্জের সিংহাসন প্রদান করিতে পারিতেন না। শত্রুদীর্ণ নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের অধীশ্বরগণ কখনই এক পুরুষের মধ্যে মহারাজ রাজচক্রবর্ত্তী পদলাভ করিতে পারিতেন না। এই কারণে অনুমান হয় যে, বিদেশীয় রাজগণের আক্রমণ শেষ হইলে গোপালদেব গৌড়-মগধ-বঙ্গের সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন[১]; গুর্জ্জররাজ বৎসরাজ ৭৮৩ খৃষ্টাব্দে জীবিত ছিলেন বটে, কিন্তু তখন বোধ হয় তিনি ধ্রুব ধারাবর্ষ কর্ত্তৃক পরাজিত হইয়া মরুভূমিতে আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছেন। অনুমান হয়, গোপালদেব ৭৮৫—৭৯০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে রাজা নির্ব্বাচিত হইয়াছিলেন। তারানাথ বলিয়াছেন যে, গোপালদেব পঁয়তাল্লিশ বৎসরকাল রাজত্ব করিয়াছিলেন[২] এবং ভিন্সেণ্ট স্মিথ এই উক্তি সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন[৩]। রণনীতিকুশল না হইলে অত্যাচার-পীড়িত গৌড়ীয় প্রজাবৃন্দ কখনই গোপালদেবকে নরপতি পদে বরণ করিত না। এই কারণে অনুমান হয় যে, গোপালদেব প্রৌঢ় বয়সে সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন এবং অতি অল্পকাল রাজ্য শাসন করিয়া পরলোকগমন করিয়াছিলেন। গোপালদেব ৭৯০—৭৯৫ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন সময়ে দেহত্যাগ করিয়াছিলেন।

  1. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. V, p. 47.
  2. Indian Antiquary, Vol. IV. p. 366.
  3. V. A. Smith, Early History of India, 3rd. edition, p. 378. ভিন্সেণ্ট স্মিথ অনুমান করেন যে, গোপালদেবের নিকট হইতেই গুর্জ্জরেশ্বর বৎসরাজ গৌড়বঙ্গের শ্বেত রাজছত্রদ্বয় অপহরণ করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন। বলা বাহুল্য, ইহা সত্য হইলে ধর্ম্মপাল কখনই উত্তরাপথ বিজয় করিয়া চক্রায়ুধকে কান্যকুব্জের সিংহাসন প্রদান করিতে পারিতেন না।