পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিশিষ্ট (জ)

শূর-রাজবংশ


 বাঙ্গালা দেশে শূর উপাধিধারী রাজ-বংশের অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রবল জনশ্রুতি আছে। কথিত আছে যে, আদিশূর নামক কোন রাজা ভারতবর্ষের অন্য কোন স্থান হইতে বাঙ্গালা দেশে ব্রাহ্মণ আনয়ন করিয়াছিলেন। যে জাতীয় প্রমাণ, বিজ্ঞান-সম্মত প্রণালীতে রচিত ইতিহাসে গৃহীত হইতে পারে, তদনুসারে শূরবংশীয় দুইজন নরপতির নাম মাত্র অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে। প্রথমের নাম রণশূর। প্রথম রাজেন্দ্রচোলদেব যখন দিগ্বিজয় উপলক্ষে উত্তরাপথে আসিয়াছিলেন, তখন রণশূর দক্ষিণ-রাঢ়ের অধিপতি ছিলেন। এতদ্ব্যতীত সান্ধ্যকরনন্দী-বিরচিত রামচরিতে লক্ষ্মীশূর নামক অপর মন্দারের অধিপতির নাম পাওয়া যায়। রামপালের সহিত কৈবর্ত্ত-রাজ ভীমের যুদ্ধকালে লক্ষ্মীশূর রামপালের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন। রণশূরের সহিত লক্ষ্মীশূরের কি সম্পর্ক এবং তাঁহারা একবংশজাত কি না, তাহা অদ্যাবধি নির্ণীত হয় নাই। রাজশাহী জেলায় মান্দাগ্রামে আবিষ্কৃত তৃতীয় গোপালদেবের শিলালিপিতে বোধ হয়, দামশূর নামক এক ব্যক্তির উল্লেখ আছে। লক্ষ্মীশূর ও দামশূরের প্রসঙ্গ যথাস্থানে উথাপিত হইবে। বঙ্গদেশে আবিষ্কৃত কুলগ্রন্থসমূহে দেখিতে পাওয়া যায় যে, আদিশূর নামক একজন রাজা ভারতবর্ষের অন্য কোন স্থান হইতে যজ্ঞ করাইবার জন্য বাঙ্গালা দেশে পঞ্চজন ব্রাহ্মণ আনয়ন করাইয়াছিলেন। কুলশাস্ত্র ভিন্ন অনা কোন জাতীয় গ্রন্থে আদিশূরের পরিচয় পাওয়া যায় না। এখন যে সমস্ত কুলগ্রন্থ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাদিগের মধ্যে দুই একখানি ব্যতীত অপর সমস্তই গত দুই শতাব্দীর মধ্যে রচিত। যে দুই একখানি কুলগ্রন্থ অতি প্রাচীন বলিয়া পরিচিত, তাহারও কোন পুরাতন পুঁথি আবিষ্কৃত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। বঙ্গদেশীয় কুলশাস্ত্র-গ্রন্থসমূহ যতই প্রাচীন হউক, তাহা আদিশূরের আনুমানিক আবির্ভাব-কালের বহু পরে রচিত; সুতরাং তৎসমুদয় বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে রচিত ইতিহাসের উপাদানস্বরূপ গ্রহণ