পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
বাঙ্গালার ইতিহাস।

 (৪) আমরা নানা গ্রন্থ আলোচনা করিয়া বুঝিয়াছি যে, “আদিশূর, ব্যক্তিবিশেষের নাম নহে। মুসলমান-আগমনের পূর্ব্বে বিভিন্ন সময়ে যে যে হিন্দু-নৃপতি হিন্দু-সমাজ-সংস্কারে মনোযোগী হইয়াছেন, কুল-গ্রন্থকারগণ সেই সেই নৃপতিকেই ‘আদিশূর’ নাম দিয়া গৌরবান্বিত করিয়াছেন। তন্মধ্যে রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের বীজপুরুষ ক্ষিতীশ, তিথিমেধা, বীতরাগ, সুধানিধি ও সৌভরি—পঞ্চগোত্রীয় এই পঞ্চ ব্রাহ্মণ যাঁহার যজ্ঞ করিতে আসেন, তিনি প্রথম আদিশূর।”—পৃং ১০৬।

 (৫) “সারস্বত, কান্যকুব্জ, গৌড়, মৈথিল ও উৎকলদিগের বাসভূমিই পঞ্চগৌড়। এরূপ স্থলে কান্যকুব্জও গৌড়াধিপের অধিকারভুক্ত হইয়াছিল। খুব সম্ভব তিনিই পুরুবংশমধ্যে প্রথম পঞ্চগৌড়ের অধীশ্বর হইয়াছিলেন বলিয়া পরবর্ত্তী কালে আদিশূর নামেই প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন।”

 (৬) “ভগবান্ বিষ্ণু যেমন বরাহ অবতারে জল হইতে পৃথিবী উদ্ধার করেন, ভোজদেবও সেইরূপ পৈতৃক সাম্রাজ্য উদ্ধার করিয়া ‘আদিবরাহ’ উপাধি ধারণ করেন। উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ-কুলগ্রন্থে ইনিই কান্যকুব্জাধিপ ‘আদিশূর’ বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন।”

 (৭) “মহারাজ যশোবর্ম্মার প্রেরণায় গৌড়মণ্ডলে যে সকল ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদিক ধর্ম্মপ্রচারে মনোযোগী হইয়াছিলেন, আদিশূরের পিতা মাধবকে আমরা তাঁহাদের অন্যতম মনে করি। পৃঃ ১০৮

 (৮) “পূর্ব্বেই লিখিয়াছি যে, আদিশূরের যজ্ঞ করিবার জন্য ৬৫৪ শকে পঞ্চ সাগ্নিক ব্রাহ্মণ আগমন করেন। এ সময়ে আদিশূরের সভায় ব্রাহ্মণসহ কায়স্থগণের আগমনের কথাও কোন কোন গ্রন্থে বিবৃত হইয়াছে; কিন্তু হরিমিশ্র, বাচস্পতিমিশ্র, মহেশমিশ্র, শ্যামচতুরানন প্রভৃতির প্রাচীন ও প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহে কোথাও এ কথা লিখিত হয় নাই।”—পৃঃ ১১২।

 একই ব্যক্তির রচিত একই গ্রন্থে প্রকাশিত মতগুলি পরস্পরের বিরোধী। ৬৫৪ অথবা ৬৬৮ শকে ব্রাহ্মণ আগমন এবং পঞ্চ গৌড়ে আদিশূরের সাম্রাজ্য স্থাপন ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’ নামক গ্রন্থমালার মূলমন্ত্র। এই মত প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়কে বহু কুলগ্রন্থের অবতারণা করিতে হইয়াছে; কিন্তু অবতারণাকালে উক্তিসমূহে পরস্পরের সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় নাই। যে আদিশূর