পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৭১

৬৫৪ শকাব্দে সম্রাট্ পদবী লাভ করিয়াছিলেন, তিনি কখনই ভোজদেব হইতে পারেন না; কারণ, গুর্জ্জর-প্রতীহারবংশীয় ভোজদেব খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদে সিংহাসনে আরোহন করিয়াছিলেন। বসুজ মহাশয় গ্রন্থমধ্যে ঈঙ্গিতে একাধিক আদিশূরের অস্তিত্ব স্বীকার করিয়াছেন বটে, কিন্তু অদ্যাবধি ইতিহাসে শূরবংশে আদিশূর নাম কিম্বা উপাধিধারী দুইজন রাজার অস্তিত্বের কথার উল্লেখ পাওয়া যায় নাই।

 কান্যকুব্জ-রাজ যশোবর্ম্মার রাজ্যকালে আদিশূরের সাম্রাজ্য স্থাপিত হইয়াছিল, ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাসে’ বসুজ মহাশয় ইহাই প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু যশোবর্ম্মার রাজত্বকালে কোন্ গৌড়েশ্বর কান্যকুব্জ বিজয় বা অধিকার করিয়াছিলেন, ইহা ঐতিহাসিক সত্যরূপে গৃহীত হইতে পারে না। বস্তুতঃ শশাঙ্ক নরেন্দ্রগুপ্ত, ধর্ম্মপাল ও দেবপাল ব্যতীত অন্য কোন গৌড়-রাজের পক্ষে কান্যকুব্জ জয় বা অধিকার অসম্ভব ছিল। শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমাণ করিরাছেন যে—

বেদবাণাঙ্গশাকে তু নৃপোঽভূচ্চাদিশূরকঃ।
বসুকর্ম্মাঙ্গকে শাকে গৌড়ে বিপ্রাঃ সমাগতাঃ॥

এই শ্লোকটি ৺বংশীবদন বিদ্যারত্ন-সংগৃহীত কোনও কুলগ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় না, পরন্তু ‘কুলদোষ’ নামক গ্রন্থে নিম্নলিখিত লোকটি লিখিত আছে।

ক্ষত্রিয়বংশে সমুৎপন্নো মাধবো কুলসম্ভবঃ।
বসু ধর্ম্মাষ্টকে শকে নৃপ (পো) ভু (ভূ)চ্চাদিশূরকঃ॥

সুতরাং অদ্যাবধি কুলশাস্ত্রোল্লিখিত যে সমস্ত প্রমাণ আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার উপরে নির্ভর করিয়া কান্যকুব্জ-রাজ যশোবর্ম্মার রাজত্বকালে, খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর প্রথমার্দ্ধে আদিশূরের আবির্ভাবকাল নির্ণয় করা অথবা গৌড়ে একাধিক আদিশূরের অস্তিত্ব স্বীকার করা যাইতে পারে না।

 কোন্ দেশ হইতে বঙ্গে ব্রাহ্মণ আগমন করিয়াছিল, সে সম্বন্ধেও কুলশাস্ত্রে মতদ্বৈধ আছে,—

 (১) রাঢ়ীয় প্রাচীন কুলাচার্য্য হরিমিশ্র লিখিয়াছেন—“মহারাজ আদিশূর পঞ্চ-গৌড়ের অধিপতি ছিলেন, কাশীশ্বরের সঙ্গে তাঁহার স্পর্দ্ধা ছিল। তাঁহার সম্মান ও দানশক্তি দেখিয়া কাশী-রাজকেও লজ্জিত হইতে হইয়াছিল। কিন্তু মহারাজ আদিশূরের সভায় সাগ্নিক ব্রাহ্মণ ছিলেন না। এ জন্য তিনি ব্রাহ্মণ কর্ত্তৃক নিন্দিত স্বরাজ্যে