পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫২
বাঙ্গালার ইতিহাস।

ইউরোপের মধ্যযুগের ইতিহাসে যেরূপ ফিউডাল (feudal) প্রথা প্রচলিত ছিল, নববিজিত রাজ্যে গোরীয় সুলতানগণ সেইরূপ প্রথাই প্রচলিত করিয়াছিলেন। কোন নূতন হিন্দুরাজ্য বিজিত হইলে সুলতান পূর্ব্বতন ভূম্যাধিকারিগণকে অধিকারচ্যুত করিয়া তাহাদিগের পরিবর্ত্তে বিশ্বস্ত সেনা-নায়কগণকে ভূমি প্রদান করিতেন। মিন্‌হাজ-উস্-সিরাজের বর্ণনানুসারে গৌড়-মগধ-বিজেতা মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার গোর-উপত্যকার অধিবাসী ছিলেন। সুলতান মহম্মদ কর্ত্তৃক চৌহান ও গাহডবাল-রাজ্য বিজিত হইলে তিনি অর্থোপার্জ্জনের চেষ্টায় জন্মভূমি পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। মহম্মদ ভারতবর্ষে আসিয়া অযোধ্যা বা আউধের নূতন ভূম্যাধিকারী মালিক হসাম্-উদ্দীন আগল্‌বকের অধীনে সেনাদলে প্রবিষ্ট হইয়াছিলেন[১]। তিনি গাহডবাল-রাজ্যের একাংশ জায়গীরস্বরূপ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং জায়গীর হইতে সেনা লইয়া চতুর্দ্দিকের গ্রাম ও নগরসমূহ লুণ্ঠন করিতেন। মিনহাজ্ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন যে, এই সময়ে মহম্মদ বর্ত্তমান পাটনার নিকটবর্ত্তী মনের এবং বিহার নগর পর্য্যন্ত লুণ্ঠন করিতে আসিতেন[২]। গাহডবাল-বংশের ক্ষমতার হ্রাস হইলে গোবিন্দপালদেব বোধ হয়, মগধের পূর্ব্বভাগে উদ্দণ্ডপুর, নালন্দ, বিক্রমশিলা প্রভৃতি কয়েকটি ক্ষুদ্র নগরের অধিপতি ছিলেন। পূর্ব্বে সেন-বংশজ লক্ষ্মণসেনের পুত্রগণের সহিত তাঁহার প্রীতিবন্ধন ছিল না, সুতরাং মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ারের অত্যাচার নিবারণ করা তাঁহার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার লুণ্ঠন-লব্ধ অর্থে নূতন সেনাদল গঠন করিয়া যখন গোবিন্দপালের রাজধানী আক্রমণ করিলেন, তখন মুষ্টিমেয় সেনা লইয়া নগর-রক্ষা মগধ-রাজের পক্ষে অসম্ভব দেখিয়া

  1. Tabaqat-i-Nasiri, (Trans. by Raverty), р. 549.
  2. Ibid, p. 550.