পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
২১

এই কীলকটির গাত্রে কতকগুলি মনুষ্যমূর্ত্তি ও কতকগুলি অক্ষর আছে। এই কীলকটি এক্ষণে নাগপুরের চিত্রশালায় বা মিউজিয়মে আছে। কিছুদিন পূর্ব্বে এই কীলকটির চিত্রদর্শনে একজন ইউরোপীয় পণ্ডিত বলেন যে, ইহাতে কীলকাক্ষরে একটি খোদিতলিপি আছে এবং কীলকটি বাবিরুষের একটি প্রাচীন মুদ্রা (Cylinder seal)। প্রাচীনকালে বাবিরুষে এই জাতীয় মুদ্রার (শিলমোহরের) বহুল প্রচলন ছিল। এই সকল প্রাচীন শিলমোহর গোলাকার, এবং আর্দ্র কর্দ্দমের উপরে উহা গড়াইয়া দিলে চতুষ্কোণ মুদ্রা মুদ্রিত হইয়া যাইত। প্রাচীন বাবিরুষে ও আসুরে, গ্রন্থ হইতে পত্রাদি পর্য্যন্ত সমস্তই লৌহকীলকদ্বারা কর্দ্দমে লিখিত হইত; লিখন শেষ হইলে লেখকের নামযুক্ত মুদ্রা, পত্র বা পুস্তকের শেষে মুদ্রিত হইত[১]। এই জাতীয় সহস্ৰ সহস্র মুদ্রা প্রাচীন আসুর, বাবিরুষ, এমন কি প্রাচীন মিশরে পর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হইয়াছে[২]। নাগপুর চিত্রশালায় যে কীলকটি আছে তাহাতে একদিকে দুইটি বৃহৎ মনুষ্যমূর্ত্তি, চন্দ্রসূর্য্যের চিহ্ন ও তিনটি ক্ষুদ্র মনুষ্যমূর্ত্তি আছে, এবং অপরদিকে দুই পংক্তি কীলকাক্ষর আছে। বৃহদাকার মনুষ্যদ্বয়ের মধ্যে বামদিকের মূর্ত্তিটি রমণীমূর্ত্তি, সম্ভবতঃ কোন দেবী; তিনি করযোড়ে অপর মূর্ত্তির সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। অপর মূর্ত্তিটি বাবিরুষীয় পবনদেবতা আদাদের (Adad)। আদাদ প্রাচীনকালে সিরিয়াদেশে আমুরু (Amuru) নামে পূজিত হইতেন। খৃষ্টপূর্ব্ব দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে, বাবিরুষরাজ মার্দুক-নাদিন্ আখি একল্লাতিনগর জয় করিয়া সেইস্থান হইতে আদাদের মূর্ত্তি বাবিরুষনগরে লইয়া গিয়াছিলেন[৩]। কীলকাক্ষরে খোদিতলিপি হইতে জানা যায় যে

  1. Ibid. 206.
  2. Maspero’s Dawn of Civilisation, p. 757.
  3. Hall’s Ancient History of the Near East, p. 399.