পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
বাঙ্গালার ইতিহাস।

বর্দ্ধমানে নির্ব্বাণপ্রাপ্তির অতি অল্পকাল পরে শিশুনাগবংশীয় মহানন্দের শূদ্রা পত্নীর গর্ভজাত পুত্র, ভারতের সমস্ত ক্ষত্রিয়কুল নির্ম্মূল করিয়া একচ্ছত্র সম্রাট্ হইয়াছিলেন। এই সময় হইতে গুপ্তরাজবংশের অধঃপতন পর্য্যন্ত, মগধরাজ উত্তরাপথে একচ্ছত্র সম্রাট্‌রূপে পূজিত হইতেন, এবং পাটলিপুত্রই সাম্রাজ্যের একমাত্র রাজধানী ছিল। মগধে শূদ্রবংশের অভ্যুত্থান ও আর্য্যাবর্ত্ত পুনর্ব্বার নিঃক্ষত্রিয়করণের প্রকৃত অর্থ বোধ হয় যে, এই সময়ে বিজিত অনার্য্যগণ অবসর পাইয়া পুনরায় মস্তকোত্তোলন করিয়াছিলেন এবং মহাপদ্মনন্দের সাহায্যে ক্ষত্রিয়রাজকুল নির্ম্মূল করিয়াছিলেন। মহাপদ্মনন্দের পূর্ব্বে ভারতবর্ষে কোন রাজা সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত অধিকার করিয়া “একরাট্” পদবী লাভ করিতে পারেন নাই[১]। এই সময়ে (অনুমান ৩২৭ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দে) মাসিডন্‌রাজ দিগ্বিজয়ী আলেকজন্দর বা সেকেন্দর, পঞ্চনদ অধিকার করিয়া বিপাশা-তীরে উপস্থিত হইয়াছিলেন। বিপাশাতীরে, শিবিরে, তিনি আর্য্যাবর্ত্তের পূর্ব্বপ্রান্তে অবস্থিত “প্রাসিই” এবং “গঙ্গরিডই” নামক দুইটি পরাক্রান্ত রাজ্যের অস্তিত্বের কথা অবগত হইয়াছিলেন[২]। নন্দবংশ সিংহাসনচ্যুত হইলে, মৌর্য্যবংশের প্রথম নরপতি চন্দ্রগুপ্ত যখন, যবন বা গ্রীকগণ কর্ত্তৃক বিজিত পঞ্চনদ প্রদেশ পুনরধিকার করিয়া মাগধসাম্রাজ্যের আয়তন বর্দ্ধিত করিয়াছিলেন, তখন বোধ হয় দক্ষিণবঙ্গে ও দক্ষিণ কোশলে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল। চন্দ্রগুপ্তের সভায় অবস্থানকালে যবন

  1. অধ্যাপক রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, Fundamental Unity of India নামক গ্রন্থে, প্রাচীনকালে, আর্য্যাবর্ত্তে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন; কিন্তু সম্প্রতি শ্রীযুত রমাপ্রসাদ চন্দ, সমগ্র আর্য্যাবর্ত্তে মহাপদ্ম নন্দের রাজ্যকালের পূর্ব্বে রাষ্ট্রীয় ঐক্য নিতান্ত অসম্ভব ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন—সবুজ পত্র ১ম বর্ষ, পৃঃ ৪০৩।
  2. McCrindle’s Ancient India, its Invasion by Alexander the Great.