পাতা:বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (দ্বিতীয় সংস্করণ) প্রথম ভাগ.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ভূমিকা
১১

পঁচাত্তরটি (১,০২৫৭৫) হিন্দীশব্দ, শব্দ-সমুচ্চয়, বাগ্‌ধারা ও সমস্ত-পদাদি স্থান পাইয়াছে। যাহা হউক, ইংরেজী ভাষার সাড়ে পাঁচলক্ষ শব্দের মধ্যে জগতের সমগ্র ইংরেজী ভাষাভাষীদের সারা জীবনে মুষ্টিমেয় বিশিষ্টব্যক্তি ব্যতীত, কত অল্প সংখ্যক[১] শব্দ ব্যবহারে আসিয়া থাকে! জনৈক ইংরেজ পণ্ডিত সেই সংখ্যা এক-দশমাংশ (৫৫০০০) বলিয়া অনুমান করিয়াছেন। আমাদের অনুমান ইহা অপেক্ষা অনেক কম শব্দই বাস্তব-জীবনে প্রয়োজন হইয়া থাকে। উক্ত এক-দশমাংশ শব্দ-সমষ্টির ভিতর কতই না প্রাদেশিক (Provincial),[২] কত বৈদেশিক (Foreign) কত কথ্য (Colloquial), লুপ্তপ্রয়োগ (Obsolete), গ্রাম্য (Slang), অশিষ্ট (Obscene) এবং কতই অশুদ্ধ বা অপভ্রষ্ট (Vulgar) ইত্যাদি শব্দ বিদ্যমান আছে। কিন্তু সেগুলি অগ্রাহ্য করিয়া অথবা পরিত্যাজ্যবোধে উক্ত অমূল্য অভিধানগুলি হইতে বর্জ্জিত বা তাহাতে সঙ্কলনের অযোগ্য বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। বৈদিক যুগ হইতে অদ্যাবধি সুপ্রাচীন বাঙ্গালীজাতির ভাষাভাণ্ডারের শব্দসম্পদ নানা পরিবর্ত্তনের মধ্য দিয়া স্বভাবতঃই পাশ্চাত্য ভাষার বৃহত্তম অভিধানের শব্দ সংখ্যা অতিক্রম না করিলেও তাহার অন্ততঃ সমকক্ষ হইবার মত সংখ্যায় সঞ্চিত থাকিবার কথা। সহস্ৰ বৎসরাধিক প্রাচীন বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্যের অনুসন্ধানমাত্র অনুসন্ধিৎসু সুধীবর্গের চেষ্টায় কিঞ্চিদধিক অর্দ্ধশতাব্দীমাত্র হইল, লোকলোচনের গোচরে আসিতে আরম্ভ হইয়াছে। কিন্তু তদপেক্ষা প্রাচীনতর এবং প্রাচীনতম বাঙ্গালার সন্ধান এখনও হয় নাই। রাষ্ট্র-ধর্ম্ম-সমাজবিপ্লব, ভূকম্প, জলপ্লাবন, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, অগ্নিদাহ প্রভৃতি দৈব দুর্ব্বিপাক, সাগরকূলবর্ত্তী নদীমাতৃক দেশের ধ্বংসকারী জলবায়ুর প্রভাব ও কুসংস্কার এবং অযত্নের ফলে কত বাঙ্গালা গ্রন্থরাশির পাণ্ডুলিপি যে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। বাঙ্গালাভাষা ও সাহিত্যের-ইতিহাস-লেখক স্বনামপ্রসিদ্ধ ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেন, বি, এ, ডি-লিট্‌ মহাশয় উক্ত গ্রন্থে ও তাঁহার বঙ্গসাহিত্য পরিচয় গ্রন্থের (Typical Selections from old Bengali Literature) ভূমিকায় তাহার আভাসও দিয়াছেন। কিন্তু সমগ্র দেশময় ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত প্রাচীনতম ও প্রাচীনতর বাঙ্গালা হস্তলিখিত পুঁথি যাহা অশিক্ষিত দরিদ্র পল্লীগৃহে আত্মগোপন করিয়া আজিও ধ্বংসমুখ হইতে রক্ষা পাইয়া আছে, এখন তাহার সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিস্তৃত অনুসন্ধান করিবার একান্ত প্রয়োজন বোধ হইতেছে; কারণ প্রাচীন মধ্য ও মুদ্রাযন্ত্রের আশ্রয়-গ্রহণের পূর্ব্ব-সময়ের পাণ্ডুলিপি হইতে দীর্ঘকাল ধৈর্য্য ধরিয়া প্রয়োগ সম্বলিত বাক্যোদ্ধার-সহ শব্দসঙ্কলন করিবার দিন এখনও গত হয় নাই। সেই সঙ্গে এখনও আর্য্যপূর্ব্ব-যুগের বাঙ্গালা কথ্যভাষা হইতে কোলারীয় (সাঁওতালী প্রভৃতি) এবং দ্রাবিড়াদি শব্দ যাহা “অনার্য্য” “দেশজ,” “গ্রাম্য” “প্রাদেশিক” ইত্যাদি পরিচয়ে আজিও আত্মরক্ষা করিয়া চলিয়াছে।

  1. বিশ্বকবি শেক্‌স্পীয়র ইংরেজী ভাষার সর্ব্বাপেক্ষা অধিক শব্দ তাঁহার কাব্য নাটকাদি রচনার মধ্যে ব্যবহার করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার ব্যবহৃত শব্দের নির্ঘণ্ট-গ্রন্থ(concordance)-মতে পনের হাজার (১৫,০০০) বলিয়া ধার্য্য হইয়াছে।
  2. বাঙ্গালা শব্দ-কোষ-কার শ্রীযোগেশচন্দ্র রায়, এম এ, বিদ্যানিধি মহাশয়ের মতে “ভাখা”।