বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (দ্বিতীয় সংস্করণ) প্রথম ভাগ.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ভূমিকা

তাহার মূল, মূলের বিকাশ, বিকার ও পরিণতি সন্ধানপূর্ব্বক বাহির করা ভবিষ্য অভিধানকারের অন্যতম অবশ্য-কর্ত্তব্যের মধ্যে গণ্য হইবে।

 বর্ত্তমান বাঙ্গালা ভাষার অভিধানের এই দ্বিতীয় সংস্করণে যদিও এক লক্ষ পঞ্চদশ সহস্ৰাধিক শব্দ স্থান পাইয়াছে, তথাপি, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য-মহোদধির শব্দরত্নভাণ্ডার অর্দ্ধেক নিঃশেষিত হইয়াছে কিনা সন্দেহ। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক লেখ্য ও কথ্য, দেশীয় অনার্য্য বা আর্য্যপূর্ব্ব বিশুদ্ধ সংস্কৃত, তৎসম ও তদ্ভব, বিবিধ প্রাকৃত, অবঙ্গীয়, বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংগঠিত, জ্ঞানবিজ্ঞানশিল্পের বিবিধ বিভাগীয় পারিভাষিক শব্দ; বুদ্ধপূর্ব্ব, বৌদ্ধ, বৈষ্ণব-শৈবাদি সাম্প্রদায়িক, বৈদিক-পৌরাণিক-তান্ত্রিক প্রভৃতি সমাজে বিশিষ্টার্থে প্রচলিত, ধর্ম্ম-সমাজ-রাষ্ট্র-বিপ্লবে উদ্ভাবিত ও ব্যবহৃত, শুদ্ধ বা জাত্য, ব্যাকরণ-দুষ্ট অথচ ভূরি-ব্যবহারশুদ্ধ, লুপ্ত প্রয়োগ কিন্তু এক-সময়ে-প্রচলিত-ছিল-এরূপ, সাহিত্যগুরুগণের ব্যবহারশুদ্ধ, অনুবাদগ্রন্থে প্রযুক্ত বিভক্তিবিহীন শুদ্ধ সংস্কৃত শব্দ, বানান ও উচ্চারণ-ভেদে প্রাদেশিকতা প্রাপ্ত গ্রাম্যছড়া, গান, প্রবচন, লঘু-ও-লোক-সাহিত্যে প্রবিষ্ট এবং বঙ্গীভূত-বৈদেশিক-শব্দ-সম্ভারে-সমৃদ্ধ একখানি সর্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ অভিধান সঙ্কলন—অর্থাৎ বঙ্গভাষা-ও-সাহিত্য-মহাসাগর মন্থন করিয়া বা সাগরজোড়া একখানি টানা জাল ফেলিয়া যাবতীয় রত্ব নিঃশেষে ছাঁকিয়া তুলিবার মতই অসম্ভব ও আশাতীত।

 কাল পুরাতনের ভিত্তির উপর বর্ত্তমানের সৃষ্টি করিতেছে এবং অনুকূল আবহাওয়ার মধ্যে সংস্কারের বন্ধন ঘুচাইয়া নিত্য নূতনকে কুক্ষিগত করিয়া চলিয়াছে। এই কারণেই, প্রগতিহীন মাতৃভাষার ন্যায় জীবন্তভাষার সাহিত্য, ব্যাকরণ ও অভিধান কখনই কালজয়ী হয় না। নিত্যগতিশীল বিশ্বসংসারে মানুষ বর্ত্তমানের উপর দাঁড়াইয়া পশ্চাতে দৃষ্টি করে এবং ভবিষ্যতের প্রতীক্ষায় সম্মুখে পা ফেলিয়া চলে। তাহার বদ্ধজীবনের অচলায়তনের গণ্ডী হইতে সকল সংস্কারই মুক্তি চায়। জীবন্ত জাতির চলন্ত ভাষাকে তাই পরিবর্ত্তন ও বিবর্ত্তনগতির মধ্যপথে, নির্দ্ধারিত নিয়মের চিরশৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া তাহার বিশুদ্ধি রক্ষার উৎকট শুচিবাদিতা বৈয়াকরণ ও ভাষাবৈজ্ঞানিক এবং অভিধান সঙ্কলনকারের ব্যর্থপ্রয়াস। প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক শব্দসম্বলিত বৃহৎ অভিধান জাতীয় সংস্কৃতি বা কৃষ্টির স্তরক্রম। তাহা ভাষা, ব্যাকরণ ও সাময়িক সাহিত্যের অতীত-রূপের অভ্রান্ত ইতিহাসের সার্থকতা সম্পাদন করে। এই হিসাবে তাহার মূল্য ও প্রয়োজনমাত্র কালজয়ী হয়। ব্যাকরণ ও অভিধান মানবজাতির সকল জীবন্তভাষা ও সাহিত্যের অনুগামী হয় এবং উভয়ই জাতীয় জীবনে বর্ত্তমানের প্রয়োজনসাধক, ভবিষ্যতের ভিত্তিভূমি ও নবনব সংস্করণের যোগ্য হইয়া থাকে।

 শব্দের ব্যুৎপত্তিনির্ণয়, ব্যুৎপত্তিগত অর্থ, মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, দ্যোতকার্থসমূহ (Different shades of meaning) ও তাহাদের প্রয়োগ-প্রদর্শন বাঙ্গালা ভাষার অভিধানের লক্ষ্য। ভাষার