পাতা:বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম সংস্করণ).djvu/১৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নন্দ অভিহিত । নদেরচাদ উচ্চ কুলীন বংশোদ্ভ বলিয়া হরবিলাস শিক্ষিত সুশীল কস্তা লীলাৰতীকে তাহার হস্তে সম্প্রদান করিতে মনস্থ করিলে হেমৰ্চাদের সঙ্গে নদেরচাদ পত্রিী দেখিতে যায় এবং হরবিলাসের বাড়ী লীলাবতীর লেখা পড়ার পরীক্ষা গ্রহণকালে এবং আপনার বিদ্যা প্রকাশ করিবার ছলে সভাস্থলে এরূপ বর্বরতা ও কুরুচির পরিচয় দেয় যে, লীলাবতী লজ্জায় সে স্থান পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন। শেষে সুশিক্ষিত ও শিষ্ট এবং স্বীয় প্রণয়পাত্র ললিতমোহনের সহিত লীলাবতীর বিবাহ হয়। নদেরটাদ বয়াটে বা ৰেলের গুলিথোর বা নেশাখোর যুবকের আদর্শ। নন্দ ঘোষ—শৈশবে শ্ৰীকৃষ্ণ অতিশয় দুরন্তপন। করিতেন বলিয়া প্রতিবেশী ও প্রতিবেশিনীর সৰ্ব্বদাই উহার পালক পিতা নন্দ লোষের নিকট অমুযোগ করিত এবং ক্রমে কোন দোষের কাজ হইলেই লোকে না জানিয়া ব৷ অনুসন্ধান না করিয়াই বলিত এ কাজ নন। ঘোষের বেটা করিয়া থাকিবে । তাহা হইতে প্রবাদ “যত দোষ নন্দ ঘোষ” । অর্থ সম্প্রসাবণে—যে কোন দোষের কাজ হইলেই কোন নিবপরাধ ব্যক্তির স্বন্ধে আরোপকরণার্থে প্রযুক্ত । নন্দরাণী--যশোদা গোপরাজ নন্দের পত্নী বলিয়৷ নন্দরাণী। নন্দ রাজার অাদরে আদরিণী এবং নীলমণি(কৃষ্ণ)র জননী বলিয়। অতুল গৌরবের অধিকারিণী। তাহা হইতে শিশুকন্যার আদরার্থক প্রয়োগে—“কইরে আমার নন্দরাণী” । নলদময়ন্তী { নল ও দময়ন্তী দ্রঃ ] ইহাদের প্রণয় দাম্পত্য প্রেমের আদর্শ বলিয়া সীত৷ সাবিত্রী প্রভৃতি দময়ঞ্জীর সহিত উপমিত হইয়াছেন। পত্নীপ্রেমিকও নিধধরাজ নলের সহিত উপমিত হন। নীরদ [ ] পৌবাণিক ত্রিকালজ্ঞ দেবধি, ইনি মেথে চড়িয়া ত্রিভুবন ভ্রমণ করিতেন এবং বীণ৷ যথে গান করিয়া ভুবন মোহিত করিতেন। সংবাদ ও পরামর্শ দান, যুদ্ধ বিগ্রহ বিবাহাদি ংঘটনে তাহার কৃতিত্ব অসাধারণ । কোনলের দেবতা বলিয়া উহার প্রসিদ্ধি ও টেকী উtহার বাহন বলিয়া প্রবাদ আছে । তাহা হইতে— কোণাল বাধাইতে হইলে উাহার নামমন্ত্র জপ বা নাম স্মরণ করিতে হয় যথা "নারদ নারদ" | কোনলের প্রবর্তক বা পরামর্শদাতাকে বিদ্ধপার্থে "নারদ ঠাকুর”, “টেকীবাহন দেবতা", "নারদের টেকী", "নারদমুনি" প্রভৃতি বলা হয় । নিমে দত্ত—দীনবন্ধু মিত্রের সধবার একাদশী প্রহসনে পুরুষচরিত্রবিশেষ । ইংরেজী ভাষায় মুশিক্ষিত কিন্তু কুচরিত্র মাতলি ও >(t、b" বেলেল্লাপনায় অগ্রগণ্য । ইনি বলিয়াছিলেন “I read English, write English, talk English, speechisy in English, think in English, dream in English"— প্রকৃত চরিত্র অবলম্বনে রচিত বলিয়া উক্ত হয়। শিক্ষিত মাতাল ও ৰয়াটের আদর্শ। নীলমণি ( , মো ) শ্ৰীকৃষ্ণ, অঙ্গচ্ছটা নীলাভ বলিয়া নীল এবং পুরুষ শ্রেষ্ঠ (বিষ্ণুর অবতার ) বলিয়া মণি ( রত্ব ) । নগরাজ, যশোদ, গোপবালক, ব্ৰজাঙ্গন এবং আবালবৃদ্ধ বনিতার আদরের ধন ছিলেন বলিয়৷ প্রবাদে—“সবে ধন নীলমণি” । শিশুপুত্রের আদরে “কইরে আমার নীলমণি" । পদ্মলোচন—দীনবন্ধু মিত্রের রচিত প্রহসন জামাই বারিকের পুরুষচরিত্রবিশেষ । ইহার দুই স্ত্রী, বগী বিণী ( বগল ও বিন্দুবাদিনী ) । স্বামীর দক্ষিণাৰ্দ্ধ বগলার ও বামাদ্ধ বিন্দুবাসিনীর নির্দিষ্ট ছিল । বগী বিন্দির এই ভাগাভাগিতে পড়িয়া পদ্মলোচনের প্রাণান্ত পরিচ্ছেদ হইত। শেষে দুই সতীনের নিত্য কলহে ও দুর্ল্যবহারে বিরক্ত লইয়া পদ্মলোচন সংসার ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া বৃন্দাবনের ব্ৰজবাসী হন । কিছুকাল পরে পত্নীদ্বয়কে অনুতপ্ত দেখিয়া পুনরায় গৃহে ফিরিয়া যান। দুই সতীনের কলহে বিপৰ্য্যস্ত স্বামীকে জামাই বারিকের পদ্মলোচনের সহিত তুলনা করা হয়। পূতনা দ্রঃ) এই মায়াবিনী দানবী কংস রাজ কর্তৃক শিশু কুষ্ণকে বধ করিবার জন্য গোকুলে প্রেরিত হইয়াছিল। পুণ্ঠন নরাণীকে মায়ায় মুগ্ধ করিয়া ও শিশু কৃষ্ণকে ছল স্নেহ দেখাইয়া তাহার বিষাক্ত স্তন শিশুর মুখে অর্পণ করিয়৷ স্তন্য দান করিতে থাকে । কিন্তু অন্তর্যামী শ্ৰীকৃষ্ণ তাহা জানিয়া স্তন্তপান করিতে করিতে তাহার জীবনী শক্তি পয্যন্ত শোষণ করিয়া পূতনাকে বধ করেন। মৃত্যুকালে পুতনা স্বীয় দানবীরূপ ধারণ করত বিকট আৰ্ত্তনাদ করিয়৷ প্রাণ হারায় । ইহা হইতে শিগুরোগের নাম পূঙনা । শিশুকে কপট স্নেহকারিণীর প্রতি বিদ্রপোক্তি । প্রবাদে-“পুতনা বধ করে ফেল|” । প্যারী-রাধাপ্যারী ; শ্রীরাধিক । বৃষভানুরাজনন্দিনী এবং কৃষ্ণসোহাগিনী সুতরাং তাহাব কাৰ্যকলাপ পরের সমালোচনার বর্হিভূত। তাহার ক্রটি ক্রটিই নয়, তাহাকে কাহার কিছু বলিবার অধিকার নাই । স্বতন্ত্র । তাহা হইতে প্রবাদে—“রাঞ্জার নলিনী প্যারী যা বলে ( বা যা করে ) তা শোভা পার” । প্ৰহলাদ–দৈত্যপতি হিরণ্যকশিপুর পুত্র। দৈত্যকুল চিরদিনই দেবদ্বেধী বিশেষত: হিরণ্য র্তাহার কথাই | বিদ্যা কশিপু ঘোর বিষ্ণুদ্বেষী ছিলেন। তাহার ঔরসে এবং অস্বরকুলে জন্মিলেও প্ৰহলাদ আশৈশব পরম বিষ্ণুভক্ত হইয়াছিলেন। তাহা হইতে দৈত্যকুলে প্ৰহলাদের জন্ম প্রবাদে পরিণত। জাতি বা কুলের সংস্কারবিরুদ্ধ প্রকৃতিবিশিষ্ট সন্তান বা হীন এবং অসাধু বংশে হসন্তান জন্মিলে, তাহাকে লোকে “দৈত্যকুলে প্ৰহলাদ” বলিয়া থাকে । বকেশ্বর—দীনবন্ধু মিত্রের কমলে কামিনী নাটকের পুরুষচরিত্রবিশেষ। মণিপুর রাজকুমার মকরকেতনের বয়স্ত । অস্তরে ভীরুতা কিন্তু মুখে বীরত্ব প্রকাশে দ্বিতীয় Captain Boladii, প্রবাদে বীর বঙ্কেশ্বর । বিদুর ( দ্রঃ ] ধৰ্ম্মপ্রাণ, বিনয়ী বিদুরের ভক্তি ভাবে প্রদত্ত তণ্ডুলকণায় ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ পরিতৃপ্ত হইয়াছিলেন বলিয়া প্রবাদে "বিদুরের খুদ’ ( দ্র: ) । বিদ্যাদিগ্গজ-গজপতিবিদ্যাদিগ্গজ। বঙ্কিম বাবুর দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের কৌতুকপ্রদ ব্ৰাহ্মণ । ইনি ধোর কৃষ্ণবর্ণ দীর্ঘাকৃতি । বুদ্ধির সুলতা ও বিদ্যার অভাবে ইনি কথায় ও কাৰ্য্যে পদে পদে হাস্তাস্পদ হইয়াছেন । প্রথম বয়সে চতুষ্পাঠীতে ব্যাকরণ পড়িতে আরম্ভ করেন। কিন্তু একদিন রাম শব্দের উত্তর অম্ প্রত্যয়ে রামকান্ত হয় বলায় অধ্যাপক র্তাহার মেধার পরিচয় পাইয় অধ্যাপনায় বিরক্ত হন এবং এই বলিয়া বিদায় দেন—“তোমার এখানকার পাঠ সাঙ্গ হইয়াছে ; আমার আর বিদ্যা নাই যে তোমাকে দান করিব” । গজপতি গুরুর নিকট উপাধি প্রার্থনা করিলে অধ্যাপক তাহাকে “বিদ্যাদিগগজ" উপাধি দেন । তখন হইতে তিনি গজপতি বিদ্যাদিগ্‌গজ নামে পরিচিত হন । উপাধি পাইয় গজপতি গৃহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করেন। তখন তাহার স্মৃতিশিক্ষা লাভে অভিলাষ জন্মে। তিনি সুতরাং বিদ্যাদিগ্গজ হইয়াও অভিরাম স্বামীর ছাত্রভু স্বীকার করেন এবং গড়মান্দারণ দুর্গে বাস করিতে থাকেন । কিন্তু এখানে স্মৃতি শিক্ষার পরিবর্তে অভিরাম স্বামীর সুন্দরী চতুর কন্যা বিমলার সহিত সময় অসময় রসিকতা করার ফলে র্তাহার “রসিকরাঞ্জ রসোপাধ্যায়" উপাধি লাভ হয় । বিমলাকে দেখিয়া গজপতি বলেন—“দাই যেন ভাণ্ডস্থ ঘৃত ; মদন আগুন ষত শীতল হইতেছে । দেহ থানি ততই জমাট বাধিতেছে।” তথন হইতে বিমলা তাহাকে এই উপাধি দান করেন। ইনি বিমলার সহিত রসিকতায়, আসমানির সহিত প্রণয়ালাপ ও তাহার উচ্ছিষ্ট ভোজন ব্যাপারে, বনপথে বিমল ভূতের ভর দেখাইলে উদ্ধশ্বাসে পলায়নকালে জগৎসিংহের