পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

পৈতৃক সিংহাসন বেহার প্রদেশ তাঁহাকে অর্পণ করিয়াছেন; কিন্তু কার্য্যতঃ এক্ষণে জানকীরামই শাসনকর্ত্তা। সিরাজ এই কুপরামর্শ অনুসারে জানকীরামের নিকট হইতে পৈতৃক সিংহাসন উদ্ধার করিয়া স্বাধীনভাবে রাজকার্য্য পরিচালনা করিতে মনস্থ করিলেন। তিনি লুৎফুন্নিসা ও অনুচরবর্গের সহিত রাত্রিযোগে পাটনা যাত্রা করিলেন। নানা বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা দেখিয়া সিরাজ প্রথমে লুৎফুন্নিসাকে সঙ্গে লইতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু পতিগতপ্রাণা সতী পতিকে ছাড়িয়া থাকিতে অস্বীকার করায়, সিরাজ তাঁহাকে সঙ্গে লইতে বাধ্য হইয়াছিলেন।

 সিরাজ পাটনায় উপস্থিত হইয়া জানকীরামকে দুর্গ প্রত্যর্পণ করিতে আদেশ পাঠাইলেন (১১৬৩ হিঃ রজব জুলাই ১৭৫০)। জানকীরাম বিষম সমস্যায় পড়িয়া নবাব আলিবর্দ্দীর আদেশ না পাওয়া পর্য্যন্ত দুর্গদ্বার রুদ্ধ করিয়া রাখিলেন; সিরাজও বাধ্য হইয়া দুর্গ আক্রমণ করিলেন; কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মী তাঁহার প্রতি বিরূপ হইলেন। জানকীরামের সাহসী শিক্ষিত সৈনিকগণের নিকট সিরাজের সৈনিকগণ স্রোতের মুখে তৃণের ন্যায় ভাসিয়া গেল—সিরাজের পরাজয় হইল। ভীত সিরাজ লুৎফুন্নিসাকে লইয়া দুর্গের বাহিরে একটী কুটীরে সামান্য পরিচ্ছদে দীনদরিদ্রবেশে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। রাজা জানকীরাম সকলই জানিতে পারিলেন। সিরাজকে আবদ্ধ রাখা তাঁহার অভিপ্রেত নহে, বরং যাহাতে বাঙ্গালা বেহার উড়িষ্যার ভাবী নবাব অক্ষতশরীরে স্বচ্ছন্দে থাকিতে পারেন, তাহার বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন। কুটীর হইতে তাঁহাকে সসম্মানে আনয়ন করিয়া, তিনি দুর্গের বহির্ভাগে নবাবের থাকিবার উপযুক্ত স্থানে রক্ষা করিয়া, আলিবর্দ্দীর আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। সিরাজ সেখানে একরূপ নজরবন্দী হইয়া রহিলেন। নবাব