পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমিনা

কারাগারে হত্যা করে। ইংরাজেরা প্রথমে শুনিয়াছিলেন যে, সিরাজের মুর্শিদাবাদ আগমনে সৈন্যগণের মধ্যে বিদ্রোহ উপস্থিত হইবার উপক্রম হওয়ায়, মীরণ তাঁহাকে হত্যা করেন। পরে তাঁহারা সিরাজের এইরূপ নিষ্ঠুর হত্যাব্যাপারের সমস্ত গূঢ় রহস্য জানিতে পারিয়াছিলেন।[১] উল্লাসে-অধীর মীরণের আজ্ঞায় যখন সিরাজের খণ্ড-বিখণ্ডিত দেহ হস্তিপৃষ্ঠে করিয়া মুর্শিদাবাদের পথে পথে প্রদর্শিত হইতেছিল, তখন সিরাজের শত দোষ ভুলিয়া, লাঞ্ছিত অবিমৃষ্যকারী সিরাজের জন্য ব্যথিত হইয়া অশ্রু ফেলে নাই কে? আলিবর্দ্দীর প্রিয় দৌহিত্র—বাঙ্গালার শেষ হতভাগ্য নবাবের শােচনীয় পরিণাম অবলােকন করিয়া, ধন-জনযৌবন-গর্ব্বে-গর্ব্বিত সিরাজের দোষের তুলনায়, শাস্তির নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা দর্শনে স্তম্ভিত ও বিস্মিত হয় নাই কে?

 এইরূপ করিয়াও মীরণের আশা পূর্ণ হইল না। সিরাজ-জননীকে হতভাগ্যের অরুন্তুদ পরিণাম দেখাইবার জন্য যখন সিরাজদেহবাহি-হস্তী আমিনা বেগমের দ্বারদেশে উপনীত হইল, সেই সময় যে হৃদয়বিদারক দৃশ্য সংঘটিত হইয়াছিল, তাহা লেখনীতে ব্যক্ত করা যায় না। পুরমহিলারা অন্তঃপুর মধ্যে আবদ্ধ থাকায়, সিরাজ-জননী এই বিপ্লবের কিছুই অবগত ছিলেন না, কিন্তু এক্ষণে লােকমুখে সমস্ত ঘটনা জানিতে পারিয়া, দ্রুতপদে রাজপথে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পরে হস্তিপৃষ্ঠ হইতে মৃতদেহ নামাইয়া, বার বার মুখ চুম্বনপূর্ব্বক নিজবক্ষে করাঘাত করিতে লাগিলেন। যে সম্ভ্রান্ত কুল-মহিলা—দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ সিরাজজননীর চরণ কখন রাজবর্ত্ম স্পর্শ করিতে পারে নাই, সেই সিরাজ-জননী আমিনা আজ উন্মাদিনীর ন্যায় হস্তীর পশ্চাতে পশ্চাতে ছুটিতে লাগিলেন।

২৫


  1. Scrafton's “Reflections”-P. 94.