পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলিবর্দ্দী-বেগম

এদিকে রঘুজীও নানারূপে বিপর্য্যস্ত হইয়া সন্ধিস্থাপনের ইচ্ছা করিতে ছিলেন; কিন্তু গৃহশত্রু মীরহবিব তাঁহাকে বুঝাইলেন—“আর কিছুদিন যুদ্ধ চালাইলে আলিবর্দ্দীকে বাধ্য হইয়া সন্ধি সংস্থাপিত করিতে হইবে, কারণ তাঁহার রাজকোষ এখন প্রায় শূন্য; সৈনিকেরা রীতিমত বেতন না পাইয়া ক্ষুণ্ণ; অসন্তুষ্ট আফগান সামন্তগণের মধ্যে শীঘ্রই বিদ্রোহানল প্রধূমিত হইয়া উঠিবে—আমির ওমরাহগণ তাঁহার ব্যবহারে প্রীত নহে, এরূপস্থলে আপনি কেন সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হইবেন?” মীরহবিবের পরামর্শমতে রঘুজী নবাব-বেগমের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিলেন। রঘুজী তাঁহার প্রস্তাব অমান্য করিল দেখিয়া, বেগম সাহেবা সৈন্যগণকে মহারাষ্ট্রীয়-শিবির আক্রমণ করিতে আদেশ দিলেন।

 এই সময়ে আফগানসামন্তবর্গ নবাবকে বড়ই বিপন্ন করিয়া তুলিল। মুস্তাফার পরাজয়ের পর হইতেই তাহারা এক প্রকার বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিল, এক্ষণে মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে পদচ্যুত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হইয়া, প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ অন্বেষণ করিতে লাগিল এবং তাহারা কৌশলে নবাবের জামাতা জৈনুদ্দীনকে হত্যা করিয়া তৎপত্নী আমিনা বেগমকে আবদ্ধ করিয়া রাখিল।

 এই অপ্রত্যাশিত বিপদে আলিবর্দ্দী অধীর হইয়া পড়িলেন; কিন্তু ধীর প্রকৃতি বেগম সাহেবা আমিনার উদ্ধারের জন্য ও উদ্ধতপ্রকৃতি আফগানদিগকে সমুচিত শিক্ষা দিবার জন্য, অগৌণে সৈন্য-সামন্ত লইয়া নবাবকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাইয়া দিলেন। এ যুদ্ধের পরিণাম—আমিনার উদ্ধার ও আফগানসামন্তবর্গের বশ্যতা-স্বীকার।

 এদিকে আবার যখন সুচরিত্রা বেগম সাহেবা হোসেন কুলির সহিত ঘসিটী ও আমিনা বেগমের অবৈধ প্রণয় দেখিয়া মর্ম্মাহত হইলেন—যখন

৩১