পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘসিটী

ও অবসর পাইবেন। এইরূপ চিন্তা করিয়া তিনি ঘসিটি বেগমকে রলিয়া পাঠাইলেন যে, মীরনাজির আলি গােপনে তাঁহার বিলাসকক্ষে যাতায়াত করিয়া থাকে, এরূপ জনরব নগরময় রাষ্ট্র হইয়া পড়িয়াছে। ইহা অমূলক হইলেও বেগম-সাহেবার চরিত্র-মর্য্যাদায় হানিকর ও রাজবংশের পক্ষে ঘােরতর কলঙ্কের কথা; সুতরাং অবিলম্বে ঐ পাপিষ্ঠের ছিন্ন-মুণ্ড আমার নিকট প্রেরণ করিয়া এই জনরবের মূলােচ্ছেদ করা বিধেয়। বলা বাহুল্য ঘসিটি এ প্রস্তাবে কর্ণপাত করিলেন না। এখন হইতে সিরাজ ও ঘসিটি উভয়ের মধ্যে বিবাদনল প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল। বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দ্দী তখন জীবিত; তিনি এই বহ্নিশিখা নির্ব্বাপিত করিতে প্রাণপণে চেষ্টা করিয়াছিলেন; কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।

 এই ঘটনার পর হইতেই ঘসিটি বেগমের ধারণা হইল যে, পিতার মৃত্যুর পর সিরাজ মসনদে উপবিষ্ট হইয়া নিশ্চয়ই তাহার উপর অত্যাচার করিবে ও সমস্ত ধনসম্পত্তি বলপূর্ব্বক আত্মসাৎ করিবে। এই আশঙ্কাবশতঃ ঘসিটি বেগম রাজা রাজবল্লভ, মীর নাজির আলি ও কতিপয় বিশ্বস্ত অনুচর সমভিব্যাহারে মুর্শিদাবাদের সন্নিকটে মতিঝিল প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে যে, ফজল্‌কুলি খাঁর শিশুপুত্র মুরাদুদ্দৌলাকে সিংহাসনে বসাইবার জন্য ঘসিটি বিশেষ চেষ্টা করেন। এই কারণেই হউক, অথবা স্বীয় সম্পত্তি সংরক্ষণের নিমিত্তই হউক, তিনি আট দশ হাজার সৈন্যও সংগ্রহ করিয়াছিলেন। এই সমস্ত উদ্যোগ-আয়ােজন বিষয়ে তাঁহার পরলােকগত স্বামীর বিশ্বস্ত দেওয়ান, ঢাকার রাজা রাজবল্লভ তাঁহার প্রধান সহায় ছিলেন।

 নওয়াজিসের মৃত্যুর পর, সিরাজ রাজা রাজবল্পতকে বন্দী করিয়া,

৫১