পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

পাইয়া জেসারৎ খআঁ কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন। যাঁহাদের অন্নে লালিত-পালিত হইয়াছেন—যাঁহাদের কৃপায় উন্নতির চরমসীমায় উপনীত হইয়াছেন, তাঁহাদিগকে হত্যা করিতে হইবে—সেই দয়াল আলিবর্দ্দীর পরিবারবর্গের আবাল্য ঋণের প্রতিশােধ এইরূপে লইতে হইবে, ভাবিয়া শিহরিয়া উঠিলেন। স্থির করিলেন, নৃশংস মীরজাফরের অন্ন গ্রহণ না করিয়া, প্যাগম্বরের নাম লইয়া ফকিরী গ্রহণ করিব, তাহাও স্বীকার, কিন্তু অন্নদাতা, জীবনদাতা, মানসন্ত্রম-প্রতিষ্ঠাতা আলিবর্দ্দীর কন্যাগণের প্রাণনাশ করিতে পারিব না। তাই মীরজাফরের পত্রের উত্তরে তিনি আপনার অসম্মতি জানাইলেন। তখন অনন্যোপায় হইয়া মীরজাফর একজন বিশ্বস্ত জমাদারকে সহরের দুই মাইল দূরে মধ্যরাত্রে কোন নির্জ্জন স্থানে নদীবক্ষে বেগমদিগকে নিমজ্জিত করিতে আদেশ করিলেন এবং তিনি জেসারৎ খাঁকে তাহার হস্তে বেগমদিগকে সমর্পণ করিবার জন্য এক পরােয়ানা পাঠাইলেন। জমাদার কর্ত্তৃক বেগমেরা নির্দিষ্ট স্থানে নীত হইলে, উভয়ের পদদ্বয়ে গুরুভার বাঁধিয়া দিয়া জলে নিমজ্জিত করা হইল। উপায়ান্তর না দেখিয়া বেগমেরা যখন প্রাণরক্ষার্থ নৌকার পার্শ্ব ধরিয়া কোনক্রমে আত্মরক্ষার চেষ্টা করিতে লাগিলেন, তখন নির্ম্মম জমাদার তাঁহাদের মস্তকের উপর লগুড়াঘাত করিতে লাগিল; কিন্তু শােণিতাপ্লুতা হইয়াও যখন তাঁহারা শেষ অবলম্বন কাষ্ঠখণ্ডের আশা ত্যাগ করিলেন না, তখন তাঁহাদের হাত কাটিয়া দিয়া তাঁহাদিগকে ডুবাইয়া দেওয়া হইল।

৫৮