পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GdR বারীদের কাত্মকাহিনী ধরা দিল। পুলিশ এবং পরে ম্যাজিষ্ট্রেট জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “তুমি জেলের মাঝে পিস্তল কোথা পাইলে ?” কানাই উত্তরে বলিয়াছিল “ক্ষুদিরামের ভূত আমায় পিস্তল দিয়া গিয়াছে।” কানাইকে বিচার করিয়া সেসন্স সোপর্দ করা, সেসন্সের বিচার সবই হইল আলিপুর জেলের গণ্ডীর মাঝে—কি জানি ক্ষুদিরামের ভূত যদি আবার মালমসলা যোগাইয়া এ সৰ্ব্বনাশা মানুষকে পুনশ্চ কোন কুকাৰ্য্যে রত করে। চোয়াল্লিশ ডিগ্রির একটি ঘরে কানাই ও আর একটি ঘরে সত্যেন বন্ধ রহিয়া, আইনের মারপোচে জীবনের গোণা দিন কয়টি অতিবাহিত করিয়া নিশ্চিত মরণের সন্নিহিত হইতে লাগিল । সত্যেন সেসন্স আদালত হইতে মৃত্যুর সাজা পাইয়া হাইকোটে আপিল করিল, কানাই করিল না । সে বড় সাধের মরণ মরিতেই আসিয়াছে, মরিয়াই তার সুখ ; কি জানি আপিল করিতে গিয়া যদি মরণ-বঁধুর কুঞ্জ-পথে কঁাটা পড়ে। মরণের আশাপথ চাওয়া দিনগুলি সে ঘুমাইয়া ও গীত পড়িয়া কাটাইত। এই নিষ্কাম অনাবিল শান্ত সমর্পণের জীবনে তাহার চুলগুলি হইয়াছিল বড় বড়, মুখশ্ৰী হইয়াছিল দীপ্ত ও ঢলঢল, ওজনে সে অনেকখানি বাড়িয়া গিয়াছিল। মরিবার প্ৰাতে চারটার সময় তাহাকে বধ্যমঞ্চে লাইতে আসিয়া সকলে দেখিল, সে অকাতরে ঘুমাইতেছে। একটি ঘুম হইতে তার জাগরণ, আর একটি দীর্ঘতর নিবিড়তম ঘুমের জন্য। তাহার পূর্বদিন সন্ধ্যার সময় উঠানে বেড়াইতে বাহির হইয়া সে আমার ও অনেকের কুঠুরির সামনে দাড়াইয়া স্মিত-হাস্যে বিদায় নমস্কার করিয়াছিল, সেদিন প্রহরী বাধা দেয় নাই, পরন্তু আমাদের উঠানের দরজা মুক্ত রাখিয়াছিল। সে সহাস্য প্ৰসন্ন জ্যোতিৰ্ম্ময় রূপ আমি কখনও ভুলিব না, কানাই তখন মহাতাপস, প্ৰকৃত সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। পথ ভুল হউক, আর সত্য হউক, তাহার সে মরণের মহত্ব যাইবার নয়, তাহার ক্ষাত্ৰগুণের গুণমুগ্ধ মানুষ তখন ইংরাজের মধ্যেও ছিল। আমাদের দেশবোধনে আত্মদানের শেষ ঋত্বিক কানাই । তাহার পর অন্যদলে অনেক মরণই