আমাদের বেতারা টেলিগ্রাফ ፭»ዓ সাহেব জেলার হইয়া আসিল, যোগেনবাবু বরখাস্ত হইয়া শেষ বয়সে চাকুরে-জীবনের পেন্সন অবধি হারাইয়া ভরাডুবি হইলেন। প্ৰথমে কাল সিপাহী আসিয়া সকালে দুপুরে সন্ধ্যায় কুঠুরী খুলিয়া, চিড়িয়াগুলির অন্নজলের ব্যবস্থা করিত, শেষে আসিল চিফ ওয়ার্ডার টেসুরাম উইলিশ, আর তিন চার জন গোরা ওয়ার্ডার। ইহাদের বর্ণনা আমি দ্বীপান্তরের কথায় করিয়া চুকিয়াছি, এখানে আর তাহার পুনরুক্তি করিব না ; সর্বশেষে হঠাৎ একদিন খাড়া সঙ্গীন হাতে নাচাউলীর ঢঙে হাটু অবধি ঘাঘরা পরা হেলমেটধারী গোরাচাদের উদয় হইয়া, রূপে লাবণ্যে আমাদের অঙ্গন উজ্জল করিল। আত্মীয়-স্বজনের সহিত দেখা করিবার ব্যবস্থা হইল যেখানে, সেটি বাঘের খাচারই উপযোগী । একটি ঘরের মাঝখান দিয়া দু’ধারে জাল ঘেরা রাস্তা গিয়াছে তাহার মাঝে পুলিশ পাহারা ঘুরিতেছে। জালের এপাশে জেলের দিকে আমরা একজন, আর ওপাশে জেলার, চিফ ওয়ার্ডার ইত্যাদির সহিত আমাদের আত্মজন। ব্যাধের জালে সান্ত্রীবেষ্টিত জেলার শাসিত এই সাক্ষাৎ যে কি পৰ্যন্ত সুখের, তাহা ভুক্তভোগীই জানেন ; তবু না দেখিয়া আত্মীয়-স্বজনের দিন নিতান্তই কাটে না, তাই তাহারা দেখিতে আসিতেন এবং হৃদয়ে দ্বিগুণ জ্বালা বেদনা লইয়া ফিরিয়া যাইতেন । সমস্ত দায়রা ও হাইকোর্টের কাজির পালা দু’টি এইভাবে আমাদের কাটাইতে হইয়াছিল ; তন্মধ্যে সবচেয়ে অসহনীয় হইয়া দাড়াইয়াছিল, নরেন মারা যাইবার ঠিক পরে ও দায়রা আরম্ভ হইবার পূর্বের কয় সপ্তাহ ; আর লম্বা রকম জীবন্ত সমাধি হইয়াছিল সেই সাড়ে ছয় মাস, যখন আসামীদের খোয়াড়বন্দী রাখিয়া, কেবল নথীপত্ৰ ঘাটিয়া আর দুইপক্ষের গাউন ও সামলার চিহি চিহ্যি রব শুনিয়া হাইকোটি আমাদের শেষ দফা দণ্ডভাগী করা হইতেছিল। দায়রার বিচার আরম্ভ হইলে তবু আদালতে দিয়া বন্ধুবান্ধবের দৌলতে মিঠাই মণ্ড লুচি আণ্ডা খাওয়া যাইত, তারের ঘেরা খাচায় বসিয়া
পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০৭
অবয়ব