পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের অনেকেরই তখন মরণ পাইয়াছে। এক একটা জায়গায় বোমা ফেলিবার ফরমায়েস আসে। আর কে মরিবে, কে এই দুঃসাহসের কাজের আনন্দ মাথায় করিয়া নিজের জীবন লইয়া পাশা খেলিবে তাহার জন্য হুড়াহুড়ি পড়িয়া যায়। যে যাইতে পায় না, সে মুখ ভার করিয়া বসে। প্ৰফুল্ল চক্ৰবৰ্ত্তী একটা কাজে যাইতে পায় নাই বলিয়া, আমার উপর অভিমান করিয়াছিল, তাহার অভিমানও রণচণ্ডী রাখিলেন, মায়ের বরে সন্তান মরিয়া বঁচিল । সেকাজে মরিবার কথাই নহে, তবু আমাদের সব চেয়ে মনস্বী, ধীর, মহৎ-চরিত্রের ছেলে প্ৰফুল্লই সে কাজে আচম্বিতে নির্জন পাহাড়ের শৃঙ্গে বোমা ফাটিয়া মরিল। তাই বলিতেছিলাম, বুঝি সেবার মায়ের রণরঙ্গিণী রূপ। ঐখানেই সম্বরণ করিবার ইচ্ছা ছিল, নহিলে আমরা সদলবলে এমন করিয়া সব যেন পণ্ড করিব বলিয়া ধরা পড়িলাম কেন ? এই প্ৰফুল্লের কথাই উপেন তার “নির্বাসিতের আত্মকথা”য় বলিয়াছে, “এই সময় একটা দুর্ঘটনায় আমাদের মন বড় খারাপ হইয়া গেল। আমাদের একটি ছেলে অকস্মাৎ মারা পড়ে। যতগুলি আমাদের ছেলে ছিল, তাহার মধ্যে সেইটিই বোধ হয় সব চেয়ে বুদ্ধিমান। তাহার প্রকৃতির মধ্যে এমন একটা কি ছিল যে, যে তাহাকে দেখিয়াছে সেই ভাল না বাসিয়া থাকিতে পারে নাই। তাহার মৃত্যুর সংবাদে ** * একটা অন্ধ রাগ আর ক্ষোভে মনটা ভরিয়া গেল। মনটা শুধু আৰ্ত্তনাদ করিতে করিতে বলিতে লাগিল, “সব চুলোয় যাক, সব চুলোয় যাক’।