পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বারীদ্রের আত্মকাহিনী 8ܣܠ পরমান্ন, তাহা জেল না খাটিলে বোঝা যায় না। কুঠারীর মধ্যে এক এক ঘরে এক এক জন বন্ধ হইল, কেবল বোধহয় পালের গোদা আমি, উপেন ও হেমচন্দ্ৰ নিজের নিজের কুঠরীতে দুই দুই জন করিয়া সঙ্গী পাইয়াছিলাম। অতটুকু ঘরে সঙ্গী না থাকাও বিপদ, আবার থাকাও বিপদ।। ঘরের কোণে একটি করিয়া আলকাতরা মাখ টুকরি আর খানিকটা মাটি, বলা বাহুল্য এইটি আমাদের শৌচাগার। “লজ মান ভয়, তিন থাকতে নয়”-ঠাকুর শ্ৰীরামকৃষ্ণের সেই উক্তি আমাদের ঘাড়ে না বলিয়া কহিয়া আসিয়া এমন করিয়া সওয়ার হইল দেখিয়া আমি ত অবাক । এখন উপায় ? অগত্যা ছেলেদের বলিলাম, “ওরে, বাপু, তোরা একটু চোখ বেঁাজ, আমায় ট্যাক্সে দিতে হবে ।” আমার সহিত একঘরে বোধহয় পূৰ্ণচন্দ্ৰ সেন ও নরেন্দ্রনাথ বক্সি ছিল। জেলখানায় আমার জীবনে সেই প্ৰথম নিশাযাপন, বারটি বৎসর ঘুরিয়া এ নিশার যে অবসান হইবে, তখন সে রহস্য কেবল সকল চক্রের চক্ৰী বিধির মনেই ছিল । রাত্রে তিন ঘণ্টা অন্তর পাহারা বদলি হইতে লাগিল, আর প্রতিবার জুতার শব্দে বাগানের সেই স্মৃতি ঘুমের ঘোরে টনক নাড়িয়া জাগাইয়া দিল। যে বার নিদ্রাদেবী আঁচলখানি আমার সর্বাঙ্গে ঢাকিয়া আমার স্মৃতির জ্বালাও জুড়াইবার উপক্রম করিলেন, সে বার নূতন পাহারাওয়ালা বদলি হইয়া কাজ বুঝিয়া লইবার কৰ্ত্তব্যবোধে, কম্বল ঢাকা ত্ৰিমূৰ্ত্তির সন্নিহিত হইয়া ডাকিল, “এই কয়েদী।” বাকি নিদ্রাটুকু হরণ করিল, ভোর না হইতে গাছের কাক শালিক আর তাহার পর জেলের ঘন্টি । প্ৰত্যেক কুঠরীখানি ছোট ছোট পাচিল ঘেরা, সামনে একটুখানি করিয়া উঠান। পাচিলের বাহিরে পাহারা বদলি আসিবার যাইবার, কুঠীবাসীদের চােয়াল্লিশ ডিগ্রিসাৎ হইবার বা তাহা ত্যাগ করিয়া জেল ফটকমুখী যাইবার, টানা উঠান। সকালে বড় জমাদার ও একজন নায়েব জেলার আসিয়া সকল কুঠরীর চাবি খুলিয়া দিল,