পাতা:বিচিত্রা (প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

აeტ8 ] জাভাযাত্রীর পত্র Að শ্ৰী রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর দলে এই অনুষ্ঠানের জন্যে আপন আপন উপহার নিয়ে এসে DBBDSZD YkL S LLLS S Br BBDSLDLDD ক’রে আনা নয়, সমস্ত বহু যত্নে সুসজ্জিত। সেদিন দেখলুম ইয়াং-ইয়াং, ব’লে এক সহরের রাজা বহু বাহনের মাথায় তার উপহার পাঠালেন। সকলের পিছনে এলেন তার প্রাসাদের পুরনারীরা। কি শোভা, কি সজ্জা, কি আভিজাত্যের বিনয়-সৌন্দৰ্য্য। এমনি ক’রে নানা পথ বেয়ে বেয়ে বহুবর্ণবিচিত্র তরঙ্গিত উৎসবের অবিরাম প্ৰবাহ। দেখে দেখে চোখের তৃপ্তির শেষ হয় না। সব চেয়ে এই কথাটি মনে হয় এই রকম বহুদূরব্যাপী উৎসবের টানে বহু মানুষের আনন্দমিলনটি কেবলমাত্র একটা মেলা বসিয়ে বহু লোক জড়ো হওয়া নয়। এই মিলনটির বিচিত্র সুন্দর অবয়ব। নানা গ্রামে নানা ঘরে এই উৎসবমূৰ্ত্তিকে অনেকদিন থেকে নানা মানুষে ব’সে ব’সে নিজের হাতে সুসম্পূর্ণ ক’রে তুলেচে। এ হ’চ্চে বহুজনের তেমনি সম্মিলিত সৃষ্টি, যেমন ক’রে এরা নানা লোক ব’সে নানা যন্ত্রে তাল মিলিয়ে সুর মিলিয়ে একটা সচল ধ্বনিমূৰ্ত্তি তৈরি ক’রে তুলতে থাকে। কোথাও অনাদর নেই, কুগ্ৰীতা নেই। এত নিবিড় লোকের ভিড়, কোথাও একটুও কলহের আভাস মাত্র দেখা গেল না । জনতার মধ্যে মেয়েদের সমাবেশ খুবই বেশি, তাতে একটুও আপদের সৃষ্টি হয়নি। বহুলোকের মিলন যেখানে গ্লানিহীন সৌন্দৰ্য্যে বিকশিত "যথার্থ সভ্যতার লক্ষ্মীকে সেইখানেই তো আসীন দেখি ; যেখানে বিরোধ ঠেকাবার জন্য পুলিস বিভাগের 'লাল পাগড়ি সেখানে নয়; যেখানে অন্তরের আনন্দে মানুষের মিলন- কেবল যে নিরাময় নিরাপদ তা নয়, আপনা আপনি ভিতরের থেকে সৌন্দর্ঘ্যে ঐশ্বর্ঘ্যে পরিপূর্ণ, সেইখানেই সভ্যতার উৎকর্ষ। এই জিনিষটিকে এমনিই সুসম্পূর্ণভাবে ইচ্ছে করি নিজের দেশে। কিন্তু এই ছোট । বীপের রাস্তার ধারে যে ব্যাপারটিকে দেখা গেল সে কি সহজ কথা। কতকালের সাধনায়, ভিতরের কত গ্ৰন্থি মোচন ক’রে তবে এইটুকু জিনিষ সহজ হয়! জড়ো হওয়া শক্ত নয়, এক হওয়াই শক্ত। সেই ঐক্যকে সকলের সৃষ্টিশক্তি আরা, ভ্যাগের দ্বারা সুন্দর ক’রে তোলা কতই শক্তিসাধ্য। আমাদের মিলিত কাজকে সকলে এক হ’য়ে উৎসবের রূপ দেওয়া আবশ্যক। আনন্দকে সুন্দরকে নানামুৰ্ত্তিতে নানা উপলক্ষ্যে প্ৰকাশ করা চাই। সেই প্ৰকাশে সকলেই আপন আপনি ইচ্ছার আপনি আপনি শক্তির যোগদান করতে থাকলে তবেই আমাদের ভিতরকার খোঁচাগুলো ক্ৰমে ক্রমে ক্ষয় হ’য়ে যায়, কারণার জল ক্রমাগত বইতে থাকলে তলার নুড়িগুলি যেমন সুডোল হ’য়ে আসে। আমাদের অনেক তপস্বী মনে করেন। সাধনায় জ্ঞান ও কৰ্ম্মই যথেষ্ট । কিন্তু বিধাতার রচনায় তিনি দেখিয়েচেন শুধু স্বাভাবিকী জ্ঞান বল ক্রিয়া নয়, রসেই সৃষ্টির চরম সম্পূর্ণতা। মরুর মধ্যে যা কিছু শক্তি সমস্তই বিরোধের শক্তি, বিনাশের শক্তি। রস যখন সেখানে আসে তখনি প্ৰাণ আসে, তখন সব শক্তি সেই রসের টানে ফুল ফোটায়, ফল ধরায়, সৌন্দৰ্য্যে কল্যাণে সে উৎসবের রূপ ধারণ করে। বেলা আটুটা বাজােল। বারান্দার সামনে গোটা-দুইতিন মোটর গাড়ি জমা হয়েচে । সুরেন সুনীতিতে মিলে নানা আয়তনের বাক্সে ব্যাগে বুলিতে থলিতে গাড়ি বোঝাই করছেন। তঁরা একদল আগে থাকতেই খেয়াঘাটের দিকে রওনা হবার অভিমুখী। নিকটের পাহাড়ের ঘন সবুজ অরণ্যের পরে রৌদ্র পড়েচে, দূরের পাহাড় নীলাভ বাম্পে আবৃত। দক্ষিণ শৈলতােটর সমুদ্রখণ্ডটি নিঃশ্বাসের ভাপ লাগা আয়নার মতো স্নান। ঐ কাছেই গিরিবক্ষঃসংলগ্ন পল্লীটির বন-বেষ্টিনের মধ্যে সুপুরি গাছের শাখাগুলি শীতের বাতাসে দুলচে। ঝরণা থেকে মেয়েরা জলপাত্রে জল ব’য়ে আনচে । নীচে উপত্যকায় শস্তক্ষেত্রের ওপারে সামনের পাহাড়ের গায়ে ঘন গাছের অবকাশে লোকালয়ের আভাস দেখা যায়। নারকেল গাছগুলি মেঘমুক্ত আকাশের দিকে পাতার অঞ্জলি তুলে ধ’রে সুৰ্য্যালোক পান করচে। ৫ এখান থেকে বিদায় নেবার মুহুর্তে মনে মনে ভাবচি দ্বীপটি সুন্দর, এখানকার লোকগুলিও ভালো। তবুও মন এখানে বাসা বঁধতে চায় না । সাগর পার হ’য়ে ভারতবর্ষের আহবান মনে এসে পৌঁচাচ্ছে। শিশুকাল থেকে ভারতবর্ষের ভিতর দিয়েই বিশ্বের পরিচয় পেয়েছি ব’লেই যে, এমন হয় তা নয় ; ভারতবর্ষের আকাশে, বাতাসে, আলোতে, নদীতে