RR
প্ৰান্তরে প্রকৃতির একটি উদারতা দেখোঁচি, চিরদিনের মতো আমার মন তাতে ভুলেচে। সেখানে বেদনা অনেক পাই, লোকালয়ে দুৰ্গতির মূৰ্ত্তি চারদিকে-তৰু সমস্তকে অতিক্রম ক’রে সেখানকার আকাশে অনাদিকালের যে কণ্ঠ ধ্বনি শুনতে পাই তাতে একটি বৃহৎ মুক্তির আস্বাদ আছে। ভারতবর্ষের নীচের দিকে ক্ষুদ্রতার বন্ধন, তুচ্ছতার কোলাহল, হীনতার বিড়ম্বনা যত বেশি এমন আর কোথাও দেখিনি, তেমনি উপরের দিকে সেখানে বিরাটের আসন বেদী, অপরিসীমের অবারিত আমন্ত্রণ। তাই আমার মনের কাছে আজকের এই প্ৰশান্ত প্ৰভাত সেই দিকেই তার আলোকের ইঙ্গিত প্রসারিত ক’রে রয়েচে । ইতি ৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৭ ৷৷ -८त्रशष्ट्रप्रख् পুনশ্চ :-দ্রুত চলতে চলতে উপরে উপরে যে ছবি চোখে জাগল, যে ভাব মনের উপর দিয়ে ভেসে গেল তাই লিখে দিয়েছি, কিন্তু তাই ব’লে এটাকে বালির প্রকৃত বিবরণ ব’লে গণ্য করা চলবে না। এই ছবিটিকে হয়তো উপরকার আবরণের জরি বলাও চলে। কিন্তু উপরের আবরণে ভিতরের ভাবের ছাপ নিত্যই পড়ে ত। অতএব আবরণটিকে মানুষের পরিচয় নয় ব’লে উপেক্ষা করা যায় না। যে আবরণ কৃত্রিম ছদ্মবেশের মতো সত্যকে উপর থেকে চাপা দেয়। সেইটোতেই প্রতারণা করে, কিন্তু যে আবরণ চঞ্চল জীবনের প্রতি মুহুর্তের ওঠায় পড়ায়, বাকায় চোরায়, দোলায় কঁপিনে আপনা। আপনি একটা চেহারা পায় মোটের উপর তাকে বিশ্বাস করা চলে। এখানকার ঘরে মন্দিরে, বেশে ভূষায়, উৎসবে অনুষ্ঠানে সব প্রথমেই যেটা খুব ক’রে মনে আসে সেটা হচ্চে সমস্ত জাতটার মনে শিল্প-রচনার স্বাভাবিক উত্তম। একজন পাশ্চাত্য আটষ্ট এখানে তিন বৎসর আছেন ; তিনি বলেন-এদের শিল্পকলা থেমে নেই, সে আপন বেগে আপন পথ ক’রে নিয়ে এগিয়ে চলেচে, কিন্তু শিল্পী স্বয়ং সে সম্বন্ধে আত্মবিশ্বত। তিনি বলেন,- কিছুকাল পূর্বে পৰ্য্যন্ত এখানে চীনেদের প্রভাব ছিল, দেখতে দেখতে সেটা আপনি ক্ষয়ে আসচে, বালির চিত্ত [ পৌষ আপন ভাষাতেই আত্মপ্ৰকাশ করতে বসেচে। তার কাজে এমন অনায়াস প্ৰতিভা আছে যে আধুনিক যে দুইএকটি মূৰ্ত্তি তিনি দেখেচেন সেগুলি যুরোপের শিল্পপ্রদর্শনীতে পাঠালে সেখানকার লোক চমকে উঠবে এই তার বিশ্বাস। এই তো গেল রূপ উদভাবন করবার এদের স্বাভাবিক শক্তি। তার পরে, এই শক্তিটিই এদের সমাজকে মূৰ্ত্তি দিচ্চে। এরা উৎসবে অনুষ্ঠানে নানা প্ৰণালীতে সেই রূপ সৃষ্টি করবার ইচ্ছাকেই সুন্দর ক’রে প্রকাশ করতে প্ৰবৃত্ত। যেখানে এই সৃষ্টির উদ্যম নিয়ত সচেষ্ট সেখানে সমস্ত দেশের মুখে একটি শ্ৰী ও আনন্দ ব্যক্ত হয়। অথচ জীবনযাত্রার সকল অংশই যে শোভন তা বলা যায় না । এর মধ্যে অনেক জিনিষ আছে যা আনন্দকে মারে, অন্ধ সংস্কারের কত কদাচার, কত নিষ্ঠুরতা। যে মেয়ে বন্ধ্যা, প্রেতলোকে গলায় দড়ি বেঁধে তাকে অফলা গাছের ডালে চিরদিনের মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়। এখানকার লোকের এই বিশ্বাস। কোনো মেয়ে যদি যমজ সন্তান প্রসব করে, এক পুত্ৰ এক কন্যা, তা হলে প্রসবের পরেই বিছানা নিজে বহন ক’রে সে শ্মশানে যায়, পরিবারের লোক যমজ সন্তান তার পিছন পিছন বহন ক’রে নিয়ে চলে । সেখানে ডালপালা দিয়ে কোনো রকম ক’রে একটা কুঁড়ে বেঁধে তিন চান্দ্রমাস তাকে কাটাতে হয়। দুইমাস ধ’রে গ্রামের মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ হয়, পাপক্ষালনের উদ্দেশে নানাবিধ পুজাৰ্চনা চলে। প্ৰসুতিকে মাঝে মাঝে কেবল খাবার পাঠানো হয়, সেই কয়দিন তার সঙ্গে সকল রকম ব্যবহার বন্ধ। এই সুন্দর দ্বীপের চিরবসন্তু ও নিত্য উৎসবের ভিতরে ভিতরে অন্ধ বুদ্ধির মায়া সহস্ৰ বিভীষিকার সৃষ্টি করচে, যেমন সে ভারতবর্ষেও ঘরে ঘরে ক’রে থাকে । এর ভয় ও নিষ্ঠুরতা থেকে যে মোহমুক্ত জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে বাঁচায় যেখানে তার চর্চা নেই, তার প্রতি বিশ্বাস নেই সেখানে মানুষের আত্মাবমাননা আত্মপীড়ন থেকে তাকে কে বাচাবে ? তবুও এই গুলোকে প্রধান ক’রে দেখবার নয়। জ্যোতিব্বিদের কাছে সুৰ্য্যের কলঙ্ক ঢাকা পড়ে না, তবু সাধারণ লোকের কাছে তার আলোটাই যথেষ্ট । সুৰ্য্যকে কলঙ্কী বললে মিথ্যে বলা হয় না। তবুও সূৰ্য্যকে জ্যোতিৰ্ম্ময় বললেই সত্য খেলা হয়। তথ্যের ফর্দ লম্বা করা যে সব বৈজ্ঞানিকের