পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দালিয়া।

 যুবক কহিল “চোখ টিপিতে ত খুব বেশি সাহসের আবশ্যক করে না। বিশেষতঃ পূর্ব্বের অভ্যাস থাকিলে। কিন্তু সত্য বলিতেছি তিন্নি, আজ একটু ভয় পাইয়া গিয়াছিলাম।”

 বলিয়া গােপনে জুলিখার প্রতি অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া আমিনার মুখের দিকে চাহিয়া নিঃশব্দে হাসিতে লাগিল।

 আমিনা কহিল “না, তুমি অতি বর্ব্বর! সাহাজাদীর সম্মুখে দাঁড়াইবার যােগ্য নও। তােমাকে সহবৎ শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। দেখ, এম্‌নি করিয়া সেলাম কর।”

 বলিয়া আমিনা তাহার যৌবনমঞ্জরিত তনুলতা অতি মধুর ভঙ্গীতে নত করিয়া জুলিখাকে সেলাম করিল। যুবক বহুকষ্টে তাহার নিতান্ত অসম্পূর্ণ অনুকরণ করিল।

 বলিল “এমন করিয়া তিন পা পিছু হঠিয়া আইস।” যুবক পিছু হঠিয়া আসিল।

 “আবার সেলাম কর।” আবার সেলাম করিল।

 এমনি করিয়া পিছু হঠাইয়া সেলাম করাইয়া আমিনা যুবককে কুটীরের দ্বারের কাছে লইয়া গেল।

 কহিল “ঘরে প্রবেশ কর।” যুবক ঘরে প্রবেশ করিল।

 আমিনা বাহির হইতে ঘরের দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিয়া কহিল “একটু ঘরের কাজ কর। আগুণটা জাগাইয়া রাখ।” বলিয়া দিদির পাশে আসিয়া বসিল।

 কহিল “দিদি, রাগ করিস্‌নে ভাই, এখানকার মানুষগুলা এই রকমের। হাড় জ্বালাতন হইয়া গেছে।”