পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
বিচিত্র গল্প।

ধরিয়া বাষ্পরুদ্ধ কম্পিতস্বরে কহিল “বুঢ়া তবে চলিলাম। তিন্নি গেলে তাের ঘরকন্না কে দেখিবে!”

 বুঢ়া একেবারে বালকের মত কাঁদিয়া উঠিল।

 আমিনা কহিল “বুঢ়া, যদি দালিয়া আর এখানে আসে, তাহাকে এই আংটি দিয়াে। বলিয়াে, তিন্নি যাইবার সময় দিয়া গেছে।”

 এই বলিয়াই দ্রুত শিবিকায় উঠিয়া পড়িল। মহা সমারােহে শিবিকা চলিয়া গেল। আমিনার কুটীর, নদীতীর, কৈলুতরুতল অন্ধকার নিস্তব্ধ জনশূন্য হইয়া গেল।

 যথাকালে শিবিকাদ্বয় তােরণদ্বার অতিক্রম করিয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল। দুই ভগ্নী শিবিকা ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিল।

 আমিনার মুখে হাসি নাই, চোখেও অশ্রুচিহ্ণ নাই। জুলিখার মুখ বিবর্ণ।

 কর্ত্তব্য যতক্ষণ দূরে ছিল ততক্ষণ তাহার উৎসাহের তীব্রতা ছিল—এখন সে কম্পিত হৃদয়ে ব্যাকুল মোহে আমিনাকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল, মনে মনে কহিল নব প্রেমের বৃন্ত হইতে ছিন্ন করিয়া এই ফুটন্ত ফুলটিকে কোন্ রক্তস্রোতে ভাসাইতে যাইতেছি।

 কিন্তু তখন আর ভাবিবার সময় নাই। পরিচারিকাদের দ্বারা নীত হইয়া শত সহস্র প্রদীপের অনিমেষ তীব্রদৃষ্টির মধ্য দিয়া স্বপ্নাহতের মত চলিতে লাগিল, অবশেষে, বাসরঘরের